০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`

ঘুর্ণিঝড় রেমাল : বাঁধ ভেঙে ৩ গ্রাম প্লাবিত

ঘুর্ণিঝড় রেমাল : বাঁধ ভেঙে ৩ গ্রাম প্লাবিত - ছবি : নয়া দিগন্ত

ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরসহ পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি তিন ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীর নিম্নাঞ্চল এবং আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া এলাকার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তিন গ্রাম তলিয়ে গেছে। এতে ঘরবাড়ি ও পুকুর তলিয়ে বেশ ক্ষতি হয়েছে।

রোববার (২৬ মে) দুপুরে খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও সিপিপির টিম লিডার মো: রিপন মুন্সিসহ অর্ধ শতাধিক লোক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ঘুর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় উপজেলা ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ বেলা চারটা পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্রে তেমন মানুষ যায়নি বলে জানান সিপিপির টিম লিটার মো: রিপন মুন্সি।

জানাগেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘুর্ণিঝড় রেমাল পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। রোববার সন্ধ্যা নাগাদ উপকুলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। পায়রা সমুন্দ্র বন্দর এলাকায় ১০ নম্বর মহা বিপদ সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে বলে জানান সিপিপির সহকারী পরিচালক আসাদুজ্জামান। এর প্রভাবে উপকুলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীতে ব্যপক প্রভাব পরেছে। সমুদ্র বেশ উত্তাল রয়েছে।

বঙ্গোপসারগরসহ তৎসংলগ্ন পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন ফুল পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের পশুরবুনিয়া এলাকার ৪০ মিটার নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ভেতরে পানি প্রবেশ করে ঘোপখালী, উত্তর ঘোপখালী ও পশুরবুনিয়া গ্রাম তলিয়ে গেছে। ওই তিন গ্রামের মানুষ পানিতে ভাসছে। তাদের ঘরবাড়ি ও পুকুর পানিয়ে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ইসহাক মুসুল্লী।

তিনি আরো বলেন, তিন শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি পানির নিচে রয়েছে। তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের মাঝে রোববার দুপুরে ইউপি সদস্য বশির হাওলাদার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। ওই ভাঙ্গা বাঁধ নির্মাণে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ শুরু করেছে বলে জানান বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: রাকিব মিয়া।

তিনি আরো বলেন, স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পায়রা নদীতে তিন ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ রাধের বাহিরের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মো: তারেক হাসান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জামাল হুসাইন ও সিপিপির টিম লিডার মো: রিপন মুন্সিসহ অর্ধ শতাধিক লোক ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন। অপর দিকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় গাজীপুর বন্দর পানিতে তলিয়ে গেছে। এতো ব্যবসায়ীদের বেশ ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ী সাবেক ইউপি সদস্য মো: কালাম হাওলাদার।

পশুরবুনিয়া গ্রামের আব্দুর রশিদ তালুকদার, মন্নান ফকির ও শাহিনুর বেগম বলেন, নতুন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে পানিতে সব তলিয়ে গেছে। রান্না করতে পারি নাই। ইউপি সদস্য বশির হাওলাদার খাবার দিয়েছে। ওই খাবার খেয়েছি। রাতে কি হয় বলতে পারি না।
তারা আরো বলেন, বাঁধ নির্মাণকালেই দায়সারা নির্মাণ করেছে, ফলে অল্প দিনের মধ্যেই ভেঙে গেছে।

তালতলীর গাবতলী আবাসনের ছত্তার আকন বলেন, জোয়ারের পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। ছেলে মেয়ে নিয়ে রাস্তায় অবস্থান করেছি। দুপুরে খাবার খেতে পারি নাই। রাতে পানিতে কি হয় আল্লাই যানে।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, উপজেলা অধিকাংশ আশ্রায়ণ কেন্দ্র অত্যান্ত ঝুকিপুর্ণ। ওই সকল আশ্রায়ণ কেন্দ্র থেকে অন্তত ৫০০ মানুষ সাইক্লোন সেল্টারে এনেছি। আরো আনতে মাঠে কাজ করছি।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আফরাফুল আলম বলেন, ঘুর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় যথেষ্ট প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ১০১টি সাইক্লোন সেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পানি বৃদ্ধি পেয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙ্গা এলাকা পরিদর্শণ করেছি। সকল মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে কাজ করছি।


আরো সংবাদ



premium cement