রাস্তা প্রশস্ত করতে কাটা হবে ৮৫৬টি গাছ
বাড়ছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ- হেলাল উদ্দিন লিটন, তজুমদ্দিন (ভোলা)
- ০৬ মে ২০২৪, ১৪:০৫, আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১৪:১৪
প্রায় দেড়মাস ধরে দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহে বিপর্যস্ত জনজীবন। বৃষ্টিহীন খরতাপে পুড়ছে দেশের মানুষ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রকৃতির এমন উষ্ণ আচরণের জন্য মাত্রাতিরিক্ত হারে গাছ কেটে ফেলা অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন পরিবেশবাদীরা। এজন্য সরকারের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়েও বৃক্ষরোপণের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু সচেতন নাগরিকরা যখন গাছ লাগানোর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, ঠিক তখনই ভোলার তজুমদ্দিনে ৮৫৬টি গাছ কাটার সকল বন্দোবস্ত সম্পন্ন করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। তাপদহের এ দুঃসময়ে গাছ কাটার খবর ছড়িয়ে পরায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
সূত্রে জানা যায়, ভোলা জেলার তজুমদ্দিন উপজেলার মুচিবাড়িরকোনা টু দক্ষিণ খাশেরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় ৫.৪৩ কিলোমিটার রাস্তা প্রশস্ত করণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। যার বরাদ্দ নির্ধারণ হয়েছে প্রায় ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। রাস্তাটি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে মেসার্স ইউনুছ এন্ড ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে রাস্তাটি ১২ ফুট প্রশস্ত আছে, নতুন আদেশ অনুযায়ী রাস্তাটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করণ করা হবে। রাস্তা চওড়া করার জন্য দুই পাশের প্রায় ৮৫৬টি গাছ কাটার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর। ইতোমধ্যে ভোলা জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের নিলাম বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গাছগুলো কিনেছি একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। খুব শিগগিরই গাছ কাটার কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
সারাদেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য যখন বেশি বেশি গাছ লাগানোর ওপর তাগিদ দিচ্ছে সকল শ্রেণি পেশা সচেতন মহল, ঠিক তখন গাছ কাটার খবর প্রকাশ্যে আসার পর ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
উপজেলার মাহারকান্দি গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাস্তার পাশে থাকা গাছগুলোর ছায়ায় কৃষক ও শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষ মাঠে কাজের ফাঁকে একটু বিশ্রাম নেন। এ তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে এখন রাস্তার দু’পাশের পুরানো গাছগুলো কাটা হলে এলাকাটি মরুভূমিতে পরিণত হবে। তাই আমাদের দাবি, গাছগুলো রক্ষা করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যেন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
রাস্তার পাশে অবস্থিত পঞ্চপল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলেন, গরমের কারণে অনেকদিন আমাদের স্কুল বন্ধ ছিল। এখন স্কুল খুললেও গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। গাছগুলোর জন্য মাথার ওপর ছাতা না থাকলেও আরামে স্কুলে যাতায়াত করতে পারি। গাছগুলো কাটা হলে আমরা ভীষণ অসুবিধায় পরব।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো: আলমগীর কবির বলেন, কতিপয় দফতরের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের পকেট ভারী করার জন্য সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করে নির্বিচারে সারাদেশে গাছ নিধনের মহাযজ্ঞ চলছে। উন্নয়ন পরিকল্পনার উদ্যোগ নেয়ার আগে পরিবেশবিদ, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শ না নেয়ার কারণে উন্নয়নের নামে গাছ কেটে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। রাস্তা সম্প্রসারণের নামে ভোলার তজুমদ্দিনের প্রায় ৮৫৬টি গাছ কাটার খবর শুনে আমি খুবই মর্মাহত। গাছগুলো কাটা হলে মানুষ পশু, পাখি সহ বিভিন্ন প্রাণিকুল বড় ধরনের বিপর্যয়ে পরবে। গাছগুলো রক্ষা করতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। প্রয়োজনে সবাইকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে গাছ রক্ষার জন্য কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করা হবে।
বন বিভাগের দৌলতখান রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: মাহাবুব আলম জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরকে আমরা গাছের পরিমাণ ও দাম নির্ধারণে সহযোগিতা করেছি। পরিবেশ রক্ষায় তীব্রতাপদহের মধ্যে এই গাছগুলো না কাটাই উত্তম হবে। গাছগুলো রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করব।
এলজিইডি ভোলার নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, রাস্তাটি সম্প্রসারণের জন্য দুইপাশের গাছগুলো কাটা হবে। রাস্তার কাজ সম্পন্ন হলে রাস্তার দুইপাশে আবার গাছ রোপন করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা