ক্ষেত ভরা তরমুজে কৃষকের স্বপ্ন
- এইচ এম হুমায়ুন কবির কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
- ০৪ মার্চ ২০২১, ০৭:৪৭
মাঘের শুরু থেকে তরমুজ চাষ শুরু করেন চাষিরা। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে এবং রোগবালাইয়ের প্রকোপ না থাকায় তরমুজের চারা ভালো হয়েছিল। ভালো চারা ও ভালো আবহাওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন সবুজ পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে তরমুজ। স্বপ্ন দেখাচ্ছে চাষিদের।
যেখানে চোখ যাবে, সেখানেই তরমুজ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধুই তরমুজ। ভরা মৌসুম চলে পরিচর্যা, কাটা, পরিবহন ও বাজারজাত করা নিয়ে চাষিদের ব্যস্ততা। এ কারণে ক্ষেত, পথ-ঘাট, ট্রলার যত্রযত্র তরমুজের দেখা মেলে। যথাসময়ে ভোক্তার হাতে তুলে দিতেই চলছে তরমুজ নিয়ে এ ছুটোছুটি। কাজে যোগ দিয়েছে পরিবারের মহিলা সদস্যরাও। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ১২টি ইউনিয়নে চলছে তরমুজের আঞ্জাম।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি তরমুজ মৌসুমে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে দুুই হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০০০ হাজার চাষি তরমুজ আবাদ করেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় প্রতি হেক্টরে প্রায় ৩০ মেট্রিকটন ফলন উৎপাদন হবে।
মৌসুমি ফল তরমুজ আবাদে অন্যতম এলাকা হিসেবে সুপরিচিত উপকূলের পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার সর্বত্রই এ চিত্র। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় এখানকার তরমুজের গুণগতমান ভালো হওয়ায় দেশজুড়ে সুনাম ছড়িয়েছে। ফলে এ এলাকার তরমুজের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এখন এ তরমুজ নিয়েই চাষিরা স্বপ্ন পূরণের আশা বুকে বাধে। উপজেলার কাওয়ারচর গ্রামের তরমুজ চাষি বশার শিকদার বলেন, ‘কলাপাড়ার তরমুজ খেতে সুস্বাদু, আকার বড় ও রঙ লাল টুকটুকে হওয়ায় রাজধানী ঢাকার ক্রেতাদের কাছে খুবই পরিচিতি লাভ করেছে। এ কারণেই এখানকার তরমুজের চাহিদা বেশি। কদর বেশি।
এ দিকে চাষের উপযোগী জমি কমে যাওয়ায় তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের অনেক কৃষক পার করছে বেকার সময়। এ বছর জমির পরিমাণে তরমুজের আবাদ কম হলেও বিগত বছরের চেয়ে ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন তরমুজ চাষিরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সবুজ রঙের মধ্যে দোল খাচ্ছে তরমুজের পাতা। আবহাওয়া ভালো থাকায় তরমুজের ফলের রঙ বদলে গেছে। পেয়েছে নতুন যৌবন। কুয়াকাটা, ধুলাসার, বাবলাতলা, নয়াপাড়া, কলাপাড়া, ধানখালী, বালীয়াতলী ঘাটসহ সর্বত্রই তরমুজের ছড়াছড়ি। কেউ ট্রলি থেকে তরমুজ নামিয়ে ঘাটে স্তূপ করছে। কেউবা ট্রলার বোঝাই করে তরমুজ উঠাচ্ছে। আবার বাজারজাত করতে ওই সব তরমুজ নৌযান বোঝাই করে প্রতিদিন উপজেলার আন্দারমানিক এবং রামনাবাদ নদী হয়ে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী ও ভোলার অভিমুখে যাচ্ছে।
কৃষকরা জানান, এ রকম আবহাওয়া থাকলে এবার তরমুজের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর তরমুজে লাভের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে বিগত বছরের ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখবেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। এ বছর মাত্র ২০০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছে। এ ছাড়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সরকারের বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলমান থাকা তরমুজ চাষের জমি অনেকটই কমে গেছে।
কাওয়ারচর গ্রামে তরমুজ চাষি হারুন হাওলাদার বলেন, এ বছর ২৭ কড়া জমিতে তরমুজের আবাদ করেছি। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। তরমুজ ক্ষেতে প্রথম দিকে চারা পোকা ধরার কারণে আমার অনেক চারা মরে গেছে। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি।
লতাচাপলী ইউনিয়নের নয়াপাড়া এলাকায় কৃষক মনির হাওলাদার বলেন, ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। কঠোর পরিশ্রম আর আল্লাহর ইচ্ছায় তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, কলাপাড়া জমি তরমুজ আবাদে উপযোগী। এ কারণে ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের তরমুজ আবাদে আগ্রহ বাড়ছে। যারা আগাম তরমুজ চাষ করেছে তারা ভালো ফলন ও দাম ভালো পেয়েছে।