বাস শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অচল বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

জান-মালের নিরাপত্তা চেয়ে ১১টি রুটে বাস শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে বরিশালসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। ধর্মঘটের কারণে বুধবার দিনভর রূপাতলী বাসটার্মিনালে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। কেউ কেউ থ্রি-হুইলার, সিএনজি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেলে করে ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে রওয়ানা দিয়েছেন। বর্তমানে টার্মিনাল এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মালিক-শ্রমিকদের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টায় এই তথ্য জানিয়েছেন রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর কাছ থেকে হাফভাড়া আদায় নিয়ে জটিলতার একপর্যায়ে শিক্ষার্থী ও শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মারধর, বাস ও শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ধর্মঘটের কারণে টার্মিনালে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে শত শত বাস। এ কারণে রূপাতলী বাসটার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বরিশাল-খুলনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ রুট পিরোজপুর, মঠবাড়িয়া, পাথরঘাটা, ভান্ডারিয়া, ঝালকাঠি, নলছিটি, বরগুনা, বাউফল, পটুয়াখালী, কুয়াকাটায় বাস চলাচল করছে না। ফলে এই ১১ রুটের যাত্রীরা চরম দুর্ভোগকে সঙ্গী করে থ্রিহুইলার বা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে দেখা গেছে।

পিরোজপুরের বৃদ্ধ যাত্রী আবদুর রহমান জানান, গুরুত্বপূর্ণ কাজে বরিশাল এসে ধর্মঘটে আটকে গিয়েছি। এখন কিভাবে গন্তব্যে যাবো জানি না। তুচ্ছ ঘটনায় কিছুদিন পরপর এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি করা থেকে সবাইকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।

রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী জানান, কথায় কথায় আমাদের ওপর হামলা-গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। শুধু তাই নয় বেশ কয়েকবার আমাদের শ্রমিক অফিস ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবারও আমাদের অফিস ভাঙচুর করেছে তারা। আমরা এসব কার্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ চাই। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত, ক্ষতিপূরণ আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলে জানান তিনি।

বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, বাস-মালিক শ্রমিকরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে মিটিং করবেন। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে ধর্মঘট প্রত্যাহার হতে পারে বলে জানান তিনি।

মঙ্গলবার বিকেলে বিএম কলেজের এক ছাত্রীর কাছ থেকে হাফভাড়া আদায় নিয়ে ঝালকাঠি রুটের একটি বাসের হেলপার খারাপ আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিমাংসার জন্য টার্মিনালে গেলে তিনজনকে শ্রমিকরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। এতে শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া পালটা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। এ সময় পাঁচটি বাস ও শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। এরপর মঙ্গলবার রাত ৮টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেন রূপাতলী বাসটার্মিনালের শ্রমিকরা। তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মালিকরাও দাবি আদায়ে জোট বেঁধেছেন।