১৫ অক্টোবর ২০২৪, ৩০ আশ্বিন ১৪৩১, ১১ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

পাথরঘাটায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ, তথ্য সংগ্রহে যাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি

উত্তর মানিকখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা অনিয়ম - ছবি : নয়া দিগন্ত

বরগুনার পাথরঘাটায় ১৪৩ নম্বর উত্তর মানিকখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে, অনিয়মিত থাকেন অনান্য সহকারী শিক্ষকও। বিষয়টি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিক তাওহীদুল ইসলাম শুভকে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওই প্রধান শিক্ষক। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাংবাদিক রোববার (১৩ অক্টোবর) পাথরঘাটা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান নিশ্চিত করেন। ভুক্তভোগী তাওহীদুল ইসলাম শুভ বর্তমানে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির পাথারঘাটা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের ১৪৩ নম্বর উত্তর মানিকখালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস চলার কথা। সেখানে ২টার মধ্যে ক্লাস শেষ করে বাড়িতে চলে যান শিক্ষকরা। মাসের মধ্যে দু’একবার প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বিদ্যালয়ে আসেন, তখন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিয়ে চলে যান। শিক্ষক পাঁচজন উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তাদের মধ্যে দু’জন উপস্থিত দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে ঠিকমতো ক্লাস না হওয়া এবং শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাসে না আসার কারণে ভেঙে পড়েছে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠদানের জন্য কক্ষ থাকলেও এ কক্ষে তৃতীয় শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত আটজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মুঠোফোনে ভিডিও দেখতে দেখা গেছে এক শিক্ষকের। এর আগে প্রধান শিক্ষকের এমন অনিয়মের জন্য অভিযোগ তুলে ওই এলাকায় মানববন্ধন হলেও আগের অবস্থানে থেকেই তিনি এ অনিয়ম করে যাচ্ছেন।

ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিফাত ও অভিভাবক মোসা: মনি বেগম ও জোৎস্না বেগম জানান, যে বিদ্যালয়ে থেকে শিশুরা জীবন গড়তে শুরু করবে সেখানে কিছুই শিখতে পারছে না। সব ক্লাস মিলে ১০ থেকে ১৫ জন শিক্ষার্থী আসেন। প্রায় সময়ই দেখি ওই শিক্ষার্থীদের একটি কক্ষে শিক্ষকরা মোবাইল দেখেন। দুপুর ২টা বাজলেই সবাই বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে চলে যান। এ বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার অবস্থা খুব খারাপ। প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে অপসারণ করা হলে বিদ্যালয়ের লেখাপড়ার ভালো হবে বলেও দাবি করেন তারা।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক তাওহীদুল ইসলাম শুভ বলেন, কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে মানিকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাই। এ সময় প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ মাসে দু’একদিন স্কুলে এসে পুরো মাসের স্বাক্ষর দিয়ে চলে যাওয়ার প্রমাণ পাই। এছাড়াও ওই স্কুলে পাঁচজন শিক্ষক নিয়মিত উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও সেখানে পালাক্রমে দু’জন শিক্ষক উপস্থিত থাকেন। এসব বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এছাড়া তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ নিউজ প্রকাশ করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

শুভ বলেন, স্কুলের অনিয়মের নিউজ করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা রয়েছেন তারা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সে বিষয়ে বক্তব্য সংগ্রহ করি। পরে তা জানতে পেরে পুনরায় আমাকে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে নিউজ বন্ধ করতে চাপ দেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ।

অভিযোগের সত্যতা জানতে পাথরঘাটার মানিকখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পাথরঘাটা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, সাংবাদিক তাওহীদুল ইসলাম শুভ হুমকির বিষয় জানিয়ে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দীপক কুমার বিশ্বাসকে তার অফিসে গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন। পরে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবু জাফর মো: সালেহ জানান, বিষয়টি ইতিমধ্যে আমার কাছে এসেছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: রোকনুজ্জামান খান বলেন, প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদের দায়িত্ব অবহেলা করার কথা জেনেছি। তিনি সরকারি বিধি অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে থাকার কথা, তা না করে তিনি বিদ্যালয়ে মাসে দু’একদিন আসেন। তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement