২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

ইলিশের পুরো মৌসুমে দফায় দফায় বৈরী আবহাওয়া, জেলেপল্লীতে হতাশা

ইলিশের পুরো মৌসুমে দফায় দফায় বৈরী আবহাওয়া, জেলেপল্লীতে হতাশা - ছবি : নয়া দিগন্ত

ইলিশের ভরা মৌসুম তিন মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর। সেই মৌসুমও এখন শেষ দিকে। একদিকে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে না, অন্যদিকে পুরো মৌসুমজুড়ে এবার সাগরের বৈরী আচরণ গত দুই মাসে ৬ দফায়- কখনো লঘুচাপ, কখনো নিম্নচাপ যেন ইলিশ শিকারীদের জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। যাত্রা করে গিয়ে জাল ফেলতে না ফেলতেই উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর থেকে তীরে ফিরতে হয়েছে বারংবার। সামনে আসছে আবার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। সবমিলিয়ে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপকূলের জেলেদের দিন কাটছে হতাশায়। ইলিশের ভরা মৌসুম শেষ দিকে। কিন্তু জেলেদের মুখে হাসি নেই। ইলিশের আশায় সমুদ্রে গেলেও অন্যান্য মাছই ধরা পড়ছে বেশি। এতে শতকরা ৫-১০ জন লাভবান হলেও বেশিরভাগ জেলে ক্ষতিগ্রস্ত। কারো কারো সমুদ্রে যাওয়া-আসার খরচও উঠছে না।

জেলেদের সাথে কথা হলে তারা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকে ভাগ্যক্রমে কিছু জেলে লাভবান হয়েছেন। বেশিরভাগ জেলে এবার ক্ষতিগ্রস্ত। মৌসুমের শেষ দিকে এসেও আশানুরূপ মাছ জালে উঠছে না। বড় ইলিশ পরিমাণে কম। ছোট ইলিশ আর জাটকা মিলছে, তাও অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি নয়। বেশিই ধরা পড়ছে পোমা, লইট্টা, তুলার ডাটি, রুপচাঁদাসহ সামুদ্রিক অন্যান্য মাছ। এতে লাভতো দূরের কথা, যাওয়া-আসার খরচও উঠছে না কারো কারো।

অন্যদিকে পুরো মৌসুমজুড়ে আবহাওয়া এবং সাগরের বৈরী আচরণ জেলেদের পক্ষে সায় দিচ্ছে না। গত দুই মাসে ৬ দফায় কখনো লঘুচাপ, কখনো নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষে ২৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। জেলেরা বলছেন, গত ২৩ জুলাই সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর থেকে দফায় দফায় সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। ফলে সাগরে যাত্রা করে গিয়ে জাল ফেলতে না ফেলতেই উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর থেকে তীরে ফিরতে হয়েছে বারংবার। একারণে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

সাগর থেকে মাছ শিকার করে কোড়ালিয়া ঘাটে এসেছেন কাশেম হাওলাদার কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, সাগরে ঠিকভাবে মাছ ধরতে পারি না কয় দিন পর পর আবহাওয়া খারাপ, এমনিতেই সাগরে ইলিশের কোনো দেখা নেই। তিন দিন পর ঘাটে আসছি মাছ বিক্রি হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতোন। ট্রলার স্টাফদের বেতন আছেই ৪০ হাজার টাকা প্রায়। আসা-যাওয়া খরচতো আছেই। ইলিশ তো পাই নাই, অন্যান্য মাছ না পেলে খালি হাতেই ফিরে আসতে হতো আমাদের। এ বছর সাগরে নামার পর থেকে ইলিশের তেমন কোনো দেখা নাই। এরপর কিছুদিন পর পর নিম্নচাপ। আবার কয়েক দিন পরই ২২ দিনের অবরোধ (নিষেধাজ্ঞা) এভাবে চলতে থাকলে কিভাবে চলবে আমাদের জীবন।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, রাঙ্গাবালী নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১৬ হাজার ৮০৯ জন। এছাড়াও অনিবন্ধিত জেলে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার।

রাঙ্গাবালী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, এবার জেলেদের ভাগ্য সহায় হচ্ছে না। সাগরে বার বার বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা। তবে শেষ দিকে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ তাদের জালে ধরা পড়তে পারে।

এ বিষয়ে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ফিশারিজ ও মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, আমাদের দেশের উপকূলীয় বড় একটা অংশের মানুষ কিন্তু ইলিশের উপর জীবন যাপন করে। দেখা যাচ্ছে, বিগত বছরগুলোতে কিন্তু আমাদের দেশে ইলিশ পরিমাণে কমে যাচ্ছে। উপকূলীয় মানুষের যে দূরদশা তা কিন্তু কিছু মানুষের জন্য। কারণ উপকূলীয় যে পরিমাণ বিভিন্ন নামে অবৈধ জাল রয়েছে যেমন- চরঘেরা, বেহুন্দিসহ নানা নামে। এ জালগুলো উপকূলকে এমনভাবে ঘিরে রেখেছে। ইলিশকে কোনোভাবে আসতে দেয়া যাচ্ছে না। এভাবে যদি চলতে থাকে যে মানুষগুলোর জীবন-যাপন শুধু ইলিশের উপর তাদের কিন্তু জীবন হুমকের মুখে পড়বে। সুতরাং এখন যে খারাপ অবস্থা যত দ্রুত সম্ভব এই যে অবৈধ জাল আছে। তা প্রসাশনের দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এই জাল কোনোভাবেই থাকতে দেয়া যাবে না। তা না হলে বড় একটা অংশের মানুষ কিন্তু জীবন-জীবিকার ঝুঁকিতে পড়বে। এছাড়াও এখন জ্বালানি তেল-রসদসহ যাবতীয় খরচ মিটিয়ে জেলেরা সমুদ্র যাত্রা করে। কিন্তু একের পর এক বৈরী আবহাওয়ায় উত্তাল হয়ে ওঠা সাগর থেকে জেলেদের তীরে ফিরতে হয়েছে। যার কারণে ঠিকমতো মাছ ধরতে না পেরে ফিরে আসার কারণে জেলেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সামনে আসছে নিষেধাজ্ঞা। ইলিশ শিকারের সময় ফুড়িয়ে আসছে। মা ইলিশ রক্ষায় আগামী ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
জাতিসঙ্ঘ সম্মেলন থেকে যা অর্জন করলেন ড. ইউনূস ইলিশের দাম দেশে ১৬৫০, ভারতে ১১৮০ টাকা পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ দুর্নীতিমুক্ত দলই নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারবে : নূরুল ইসলাম বুলবুল ভারতে গেল ৯৯ টন ইলিশ তিস্তার পানি বাড়ছে, ফের বন্যার আশঙ্কা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ চালু হচ্ছে দুর্নীতিবাজ প্রকাশকদের শ্বেতপত্র প্রকাশ ও তাদের বিচারের দাবি সৃজনশীল প্রকাশক ওয়ার্কিং কমিটির সংস্কারের পর কী কী পরিবর্তন আসতে পারে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায়? অর্ন্তবর্তী সরকারের ভেতরে সুবিধাভোগীরা ডুকে গেছে : নুর যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সকল