ঢাবিতে পিটিয়ে মারা তোফাজ্জলের পাথরঘাটার বাড়িতে শোকের মাতম
- এ এস এম জসিম, পাথরঘাটা (বরগুনা)
- ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:১৮, আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে বরগুনার পাথরঘাটার তোফাজ্জল (৩২) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। তার এমন মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
তোফাজ্জেলকে হত্যার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকারীদের বিচার এবং আটকের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করা হয় বলেও জানা গেছে।
নিহত তোফাজ্জল পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী গ্রামের মরহুম আব্দুর রহমানের ছেলে এবং কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
জানা যায়, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্য হওয়ায় বেশ কয়েকবছর ধরেই ভবঘুরের মতো বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াত। প্রায় ১০ বছর আগে তোফাজ্জলের বাবা মারা যান। এর দুই বছর পরে মা এবং ৭ বছর পরে একমাত্র বড় ভাই মারা যান। এর পর থেকেই পরিবার ও অভিভাবকহীন হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতেন তোফাজ্জল। তোফাজ্জলের এমন মৃত্যুর খবর শুনে উপজেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তোফাজ্জল বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলা বিষয় অনার্স মাস্টার্স শেষ করে বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজে অধ্যায়নরত ছিলেন। এ অবস্থায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন।
তোফাজ্জলের চাচা ফজলুর রহমান জানান, তোফাজ্জলের বাবা আব্দুর রহমান প্রায় ১০ বছর আগে মারা যায়, এর তিন বছর পরে মারা যায় তার মা। এরপর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সে। বড় ভাই নাসিরের আশ্রয়ে থাকতে শুরু করে। ভাইও দুই বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এরপরেই অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে সে। বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাফেরা করে থাকেন তিনি। ভাই মারা যাওয়ার কিছুদিন পরে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে মারধর করে বাজারের লোকজন। এরপরেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও কাউকে মারধর বা কিছুই করত না। সে শুধু পরিচিত লোকজনের সাথে দেখা হলেই বিশ টাকা, ৫০ টাকা বা ১০০ টাকা চেয়ে নিত। কোনো কিছুতেই এর বেশি তার চাহিদা ছিল না। পাথরঘাটার এক লোক তাকে আশ্রয় দিয়ে চিকিৎসাও করেছিলেন। সেখানে থেকে কিছুটা সুস্থ হয়েছিল সে। এরপরে শুনেছি ঢাকায় চলে গেছে। ঢাকায় থাকে। যে চুরির অপবাদ দেয়া হয়েছে এটা মানার মতো না, আমি কখনোই তাকে চুরি করতে দেখি নাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে চুরি অপবাদ দেয়া হয়েছে এটার কোনো সত্যতা পাইনি। প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
এ দিকে তোফাজ্জলের চাচাত ভাই ফারুক হোসেন বলেন, আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে শুনেছি তোফাজ্জলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এখন ঢাকা মেডিক্যালে ময়নাতদন্তের জন্য নেয়া হয়েছে। সাথে আছেন চাচাত ভাই শাহাদাত হোসেন। থানার আনুষ্ঠানিকতা শেষে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবেন। লাশ আনার পর জানাজা শেষে বাবা-মায়ের পাশে দাফন দেয়া হবে।
তোফাজ্জলের বড় ভাই নাসিরের স্ত্রী শরীফা আক্তার বলেন, ভোররাতে অপরিচিত একটি ফোন নাম্বার (০১৭৪৩৭৪৫৪২৬) থেকে ফোন আসে আমার ফোনে। ফোনটা ধরার পরেই অপর প্রান্ত থেকে এক লোক তোফাজ্জল কি হয় সে কথা জানতে চায়। সে দেবর একথা বলার পরেই তিনি বলেন সে চুরি করে ধরা পরেছে তাকে বাঁচাতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। এরপর তারা ফোনে ধমক দিতে থাকে এবং বলে কোনো মিথ্যা কথা বলবেন না তাহলে সমস্যা হবে। তাদের সাথে কথা বলার কয়েক ঘণ্টা পরে বিভিন্ন লোকজনে ফোন দিয়ে জানান তোফাজ্জল মারা গেছে। আমার স্বামীর বংশ পরিচয় দেয়ার মেতোর আর কিছুই রইল না। আমার দুজন ছেলে রয়েছে, তারা বাবা হারা, তাদের একজন চাচা ছিল তাও শেষ করে দিল। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম যারা এ কাজ যারা করেছে তাদের যেন বিচার করেন।
পাথরঘাটা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: আল মামুন বলেন, আমাকে ঢাকা থেকে ফোন দিয়ে জানিয়েছে একজন মানসির ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চোর সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। এর পরে আমি নাম ঠিকানা যাচাই করে জানতে পরেছি তার বাড়ি কাঠালতীল এলাকার তালুক চরদুয়ানী গ্রামে তার বাড়ি। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। তার পরিবারকে সংবাদ দিয়েছি। তারা ঢাকাতে যোগাযোগ করেছেন, সেখান থেকে তারা লাশ নিয়ে আসবেন। লাশের আইনি প্রক্রিয়া সেখান থেকেই শেষ করে পাঠাবেন তারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা