১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কাহালু উপজেলায় নদী আছে স্রোত নেই, পানি আছে মাছ নেই

কাহালু উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নের পাঁচপীর এলাকায় নয়নজলি ভরাটকরে আধা পাকা ঘর নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা : নয়া দিগন্ত -

নদী আছে স্রোত নেই, পানি আছে মাছ নেই। স্রোত বন্ধ করেছে বালু ও মাটিখেকোরা, আর মাছ নিধন করছে কল-কারখানার মালিকরা বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে। বগুড়ার কাহালু উপজেলার উত্তর ও পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা একসময়ের যৌবনা স্রোতস্বিনী ‘নাগর নদী’ বর্ষা মৌসুমে পশ্চিম বগুড়া, শাজাহানপুর ও কাহালু উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠের পানি ছোট-বড় খাল, ক্যানেল, রাস্তার ধারের নয়নজুলি, ব্রিজ-কালভার্ট দিয়ে এই নদীতে পড়ত এবং স্রোতের মাধ্যমে তা দ্রুত নিষ্কাশন হতো। কিন্তু এলাকার চিহ্নিহ্নত বালু ও মাটিখেকোরা শুষ্ক মৌসুমে কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০টি স্পটে নাগর নদীতে বাঁধ দিয়ে শ্যালো ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে এবং এস্কেভেটর ও ভেকু মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ট্রাক বালু ও মাটি বিক্রয় করে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। রাতে দিনে বালু ও মাটিবোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টরগুলো গ্রামের কাঁচা-পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচলের ফলে রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই বাঁধগুলো অপসরণ না করায় বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে নদী তার স্রোত হারিয়ে ফেলেছে। কৃষকের আমন ধানসহ মাঠের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি শত শত মৎস্যচাষির পুকুরের চাষ করা মাছ ভেসে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এলাকায় গড়ে ওঠা মিল, কল-কারখানা, ফ্যাক্টরি ও চাতালের বিষাক্ত বর্জ ফেলার কারণে নদীতে পানি থাকলেও কোনো ধরনের মাছ নেই। আর এ পানি ব্যবহার করলেই চুলকানি, পাঁচড়াসহ বিভিন্ন ঘা দেখা দেয়। বিশেষ করে দুপচাঁচিয়া ব্রিজ থেকে শুরু করে তালোড়া হয়ে কাহালু উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের পিঁপড়া, ধানপূজা পর্যন্ত প্রায় ১২ থেকে ১৪ কিলোমিটার জুড়ে নদীতে কোনো মাছ থাকতে পারছে না। ফলে দেশী প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দু-একটি মাছ স্রোতের তোড়ে ভেসে এলেও দূষিত বর্জ্যরে কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে মরে যায়।
আরো দেখা গেছে, বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের মুরইল, কালিয়ার পুকুর, বিবির পুকুর, পাগলাপীর ও কাশিমালাসহ বিভিন্ন সড়কের দু’পাশে অর্ধশত স্থানে নয়নজুলি ভরাট করে মিল, কল-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গাপুর-জামাদার পুকুর সড়কের দু’পাশে নয়নজুলি ও ব্রিজের মুখ ভরাট করে পুকুর খনন, কল-কারখানাসহ স্থাপনা নির্মাণের ফলে জামগ্রাম ও মালঞ্চা ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলের মাঠে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার দেওগ্রাম-রানীরহাট এবং বগুড়া-তালোড়া সড়ক এবং রেলওয়ের নয়নজুলি ভরাট করে আবার কোথাও অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষ করায় বর্ষার পানি নিষ্কাশনের পথগুলো সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ যায়। শুধু তাই নয় কাহালু-তালোড়া রেলওয়ের নয়নজুলি দিয়ে পানি নিষ্কাশনে প্রধান নয়নজুলি/খালের পাঁচপীর রেলওয়ে স্টেশনের পূর্ব পাশ ও নাগর নদীর মুখে পাঁচপীর মাজারের পাশে নয়জুলির দু’পাশে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের ফলে পাকা রাস্তা ধারের বিভিন্ন পুরনো গাছ পড়ে যাচ্ছে, যা রাতের অন্ধকারে উধাও হয়ে যায়। আর এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ব্রিজ, কালভার্ট ও পাকা রাস্তা হুমকির মুখে পড়েছে।
এ সমস্যাগুলো উপজেলা পরিষদের মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় উপস্থাপন এবং পত্রিকাগুলোয় ফলাও করে প্রাকাশ করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিরা এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো প্রদক্ষেপ গ্রহণ না করায় উপজেলাবাসী হতাশ হয়ে পড়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement