১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্রহ্মপুত্র সেতুর ইজারায় ‘সমঝোতা’

রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার
-

- অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ হাইকোর্টের
- ইজারার মেয়াদ শেষ, অভিযোগ বিবেচনা করার আইনগত সুযোগ নেই : নির্বাহী প্রকৌশলী

ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত চীন মৈত্রী সেতুর টোল ইজারার দরপত্রে ‘সমঝোতার’ অভিযোগ উঠেছে। এ ক্ষেত্রে প্রভাবশালী মহলের বাধার কারণে অনেকেই শিডিউল জমা দিতে পারেনি। এমনকি শিডিউল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে সরকার কয়েক কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছেন ঠিকাদাররা। এসব অভিযোগের তোয়াক্কা না করে ইতোমধ্যেই ইজারা প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে তুলনামূলক বিবরণী (সিএস) অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২৭ মে ময়মনসিংহ সড়ক ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে দরপত্র দাখিলে বাধা ও শিডিউল ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে গত ২৯ মে নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন ভুক্তভোগী মেসার্স সৌরভ ব্রিকসের স্বত্ব¡াধিকারী মাহাবুবুল হক। ওই দিন ঘটনাটি অবহিত করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। কিন্তু এসব অভিযোগের তদন্ত করে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া করা হয়নি বলেও জানান এই ভুক্তভোগী ঠিকাদার। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো: মইন উদ্দিন অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান।
জানা যায়, গত ১৪ বছর ধরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর নির্মিত চীন মৈত্রী সেতুর শম্ভুগঞ্জ টোলপ্লাজার ইজারাদার মেসার্স মোস্তফা কামালের নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং সাবেক সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর এমদাদুল হক মণ্ডল। ওই সেতুর ইজারা মেয়াদের তিন বছরে প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা টোল আদায় হয়। প্রভাবশালী মহলটির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কম টাকায় ইজারা দিয়ে আসছে। একাধিক ঠিকাদারের অভিযোগ, বর্তমান সরকারের আমলে সব ধরনের টেন্ডার ‘ইজিপি’ করলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ এই সেতুর ইজারা ম্যানুয়েলি করেছেন। মূলত প্রভাবশালী মহলের সমঝোতার সুযোগ করে দিতেই ম্যানুয়েল প্রক্রিয়া বহাল রেখেছেন।

সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২১ নভেম্বর প্রথম দফায় এই সেতুর ইজারা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৯ মে সর্বশেষ সপ্তম দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ১৫ জন ঠিকাদার শিডিউল কিনলেও জমা দিয়েছেন সাতজন। মেসার্স সৌরভ ব্রিকসের স্বত্ব¡াধিকারি মাহাবুবুল হকের সাথে সমঝোতা না হওয়ায় মোস্তফা কামাল দরপত্র দাখিল করতে গেলে তাকে বাধা দেয় প্রভাবশালী মহলের লোকজন। ঠিকাদার মাহাবুবুল হক জানান, গত ২৭ মে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সপ্তম দফায় দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল। নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগে পার্টনারদের সাথে নিয়ে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে দরপত্র জমা করতে যান। এ সময় নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুপস্থিতিতে ১০-১২ অজ্ঞাত সন্ত্রাসী তাদের দরপত্র জমা দিতে বাধা দেয় এবং দরপত্রটি ছিনিয়ে নেয়। এ ব্যাপারে সড়ক কর্তৃপক্ষ ও থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ ব্যাপারে গত ১১ জুন হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন বিচারক। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী অভিযোগ তদন্ত না করে আগামী ৩০ জুন চলতি ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে অভিযোগ বিবেচনা করার আইনগত সুযোগ নেই বলে নিষ্পত্তি করা হলো মর্মে জবাব দিয়েছেন। অথচ এর আগে ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একাধিকবার সড়ক ও জনপদ বিভাগ সরাসরি টোল আদায় করার নজির রয়েছে।

দরপত্র দাখিলে সমাঝোতার কথা স্বীকার করে মেসার্স মোস্তফা কামাল এন্টাপ্রাইজের অংশীদার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মণ্ডল বলেন, ‘ঠিকাদারি কাজে সবখানেই নিকু (সমঝোতা) হয়, আমরাও করেছি। যাদের বিডি জমা ছিল, তাদের সবার সাথে আমাদের নিকু হয়েছে। এখন কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করতেই পারে। এতে কিছু যায়-আসে না। তবে টেন্ডার জমায় কাউকে বাধা দেয়া হয়নি।
ময়মনসিংহ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী খাইরুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, সাতটি দরপত্র জমা পড়েছে। সর্বোচ্চ দর ৫৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা হয়েছে। ইজারা প্রক্রিয়ার একটি তুলনামূলক বিবরণী (সিএস) প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত দিবে, সেমতেই ব্যবস্থা নেয়া। হাইকোর্টের নির্দেশনার ব্যাপারে তিনি বলেন, যথাযথভাবে নির্দেশনা মেনেই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। দরপত্র জমা দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়ার কোনো প্রমাণ পাইনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement