১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
রেমালের প্রভাবে বিশুদ্ধ পানির অভাব ও পানিবাহিত রোগ বৃদ্ধি

উপকূলের শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকিতে

পুকুরের নোনাপানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

‘ও ভাই, কি আর কমু, না পারি কইতে, না পারি সইতে, তবুও খোদার দয়ায় বিষখালী নদীর পারে আজ ৪৪ বছর ধরে মাছ দইররা বৌ, পোলা লইয়া বসবাস করতে আছি। বইন্যা বাদল মোগো জীবনের সঙ্গী, এ লইয়াই থাহি। বড় বইন্যা আওয়ার আগে মাইকে হুইন্না মোরা ছোট ছোট পোলা, মাইয়া, মুরগি, গরু, আশ, কাপোড় চোপড় লইয়া সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয়নি। বইন্যা যাওয়ার পরে আমগো আরো দুর্ভোগ ও দুর্দশা বাইড়া যায়। নদী ও খালে সাগর থাইক্যা লবণাক্ত পানি আসায় বিশুদ্ধ পানির অভাব। মোগো গুরাগারার আবার রোগ ব্যাধি বাইররা গেছে।’ ভারাক্রান্ত গলায় এ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার বামনা উপজেলার বিষখালী নদীর পারে কলাগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা জেলে সোনা মিয়া। তিনি তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের দুর্যোগের পরে পানিবাহিত রোগে ভুগছেন এখন।
সম্প্রতি উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রা সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। বরগুনায় রেমালের প্রভাবে উপকূলের শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ রোগ। ইতোমধ্যে শিশুসহ যুবক, যুবতী ও বৃদ্ধদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে এই পানিবাহিত রোগ। জেলার বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, বেতাগী, বামনা ও পাথরঘাটার বিভিন্ন অঞ্চলের খাল, নদী ও পুকুরে ঢুকে পড়েছে সাগরের লোনা পানি।

স্থানীয় সমাজসেবক হেমায়েত উদ্দিন বাচ্চু নাজির জানান, পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত ও পরিবেশের ক্ষতি নিয়ে আমরা চিন্তিত। এমনিতেই বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির সঙ্কট, তার ওপর ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে নদী, খাল, ডোবা ও পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। রান্না ও গোসলের জন্য সুপেয় পানি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন উপকূলবাসী।
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ ডোবা ও পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে গেছে। ডালপাল ও গাছের পাতা পচে পানি দুর্গন্ধ হয়ে গেছে। সংক্রমণ তৈরি হয়েছে নানাবিধ রোগের।
বামনা সদরের পশ্চিম সফিপুর গ্রামের সাবিনা আক্তার জানান, তার ১৪ মাসের মেয়ে আলীয়া নূর আকসাকে টিউবওয়েলের পানি দিয়ে গোসল করালেও চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। রাজিব হোসেন নামের আরো একজন বলেন, তার বাড়ির পুকুরে নোনা পানি ঢুকেছে। সেই পানি দিয়ে রান্নাও করা যায় না।
বামনা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: সুমন বলেন, আমারা সারাক্ষণই পরামর্শ দিয়ে আসছে এই পানি ব্যবহার না করার। করলেও আগে তা ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে নিতে হবে।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শামসুদ্দোহা বলেন, এ ক্ষেত্রে সবার উচিত টিউবওয়েলের বা পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করা। বর্তমানে এ অঞ্চলের পানির অবস্থা এমন যে দ্রুত এর সমাধান না করলে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে।

 


আরো সংবাদ



premium cement