১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

সাতক্ষীরার প্রাণ সায়ের খাল দখল আর দূষণে প্রাণহীন

প্রাণ সায়ের খালের দূষিত পানিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন আশপাশের অধিবাসীরা : নয়া দিগন্ত -

দখল আর দূষণে অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে সাতক্ষীরার প্রাণ সায়ের খাল। ভরা যৌবন নিয়ে এক সময় সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ কেন্দ্র হয়ে প্রবহমান ছিল এই প্রাণ সায়ের খাল। কিন্তু যৌবন হারিয়ে সেটা এখন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে ফেলা হচ্ছে ইচ্ছামতো ময়লা-আবর্জনা। ফলে বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে খালটি। সব কিছু দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
প্রাণ সায়ের খালের পাশ দিয়ে যেসব অস্থায়ী দোকানপাট গড়ে উঠেছে সেসব দোকানের উচ্ছিষ্ট ময়লা এখানে ফেলা হচ্ছে। বিশেষ করে সুলতানপুর বড়বাজারের পশু জবাইয়ের সব আবর্জনার পাশাপাশি মাছ বাজারসহ বাজারের অন্যান্য সব ময়লা ফেলা হচ্ছে পাশের প্রাণ সায়ের খালে। ফলে ময়লা-আবর্জনায় খালের পানি পচে কালো হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পচা দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার তাগিদে নাক চেপে খালপাড়ের রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছেন মানুষজনকে।
স্থানীয়রা জানান, ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন। মরিচ্চাপ নদের সাথে বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করা হয়। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সাথে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খাল। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণ সায়ের খাল।
খালপাড়ের বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন খালপাড়ের এ সড়ক দিয়ে কয়েক শ’ মানুষ হাঁটাহাঁটি করেন এবং গাড়ি করে তাদের গন্তব্যে যান। কিন্তু খালপাড়ের রাস্তায় তাদের নাক চেপে ধরে চলাচল করতে হয়। খালের আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়াও বড় বাজারের ব্যবসায়ী ও অন্য ব্যবসায়ীরা ময়লা ও আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এতে সাতক্ষীরা শহরের পরিবেশ অনেক দূষিত হয়ে পড়েছে।
মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, বেশ কিছু দিন আগে পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সঙ্গীতার ব্রিজ পর্যন্ত খালের ময়লা আবর্জনা অপসারণ করলেও সুলতানপুর বড়বাজারের কাছে এখনো পরিষ্কার করেনি। ফলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে রয়েছে। প্রাণ সায়ের খালকে যারা ভাগাড়ে পরিণত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, বিষয়টা আমাদের নজরে আছে যে বা যারা এই ঐতিহাসিক প্রাণ সায়ের খালকে দখল এবং দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাতক্ষীরা শহর অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। প্রাণ সায়ের খাল তো দখল আর দূষণে শেষ। শহরের ছোট বড় সব নদী-খাল সব দখলে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা আবর্জনা না ফেলে, সে জন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছে না। জেলা প্রশাসকের সাথে আলাপ করেছি। খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাণ সায়ের খালপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদারদের নোটিশ করে নিষেধ করা হবে। তারা না শুনলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছেন না। প্রাণ সায়ের খাল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement