১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কাউখালীতে গৃহহীন হাজারো মানুষের ত্রাণের জন্য হাহাকার

-

ঘরডার উপরে গাছ পইরা ভাইঙ্গা গেছে, রান্নার চুলাও ভাইস্যা গেছে। আল্লায় মোগো জানডা বাঁচাইয়া রাখছে। ঘরডা বানাইতে না পারলে স্বামী-পোলাপান লইয়া কোথায় থাকমু? ঘরে নাই কোনো খাওন। মোগো কেউ খোঁজখবর রাহে না। আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আমরাজুরী ইউনিয়নের সোনাকুর গ্রামের রাশিদা বেগম।
গত কয়েক দিন ধরে উপজেলা পরিষদের সামনে সরেজমিন দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্ষতিগ্রস্ত শত শত নারী, পুরুষ শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে পরিষদের সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে যাচ্ছেন। বাসুরি গ্রামের বৃদ্ধ মনোয়ারা বেগম ও বদরপুর গ্রামের সরোয়ার হোসেনসহ উপস্থিত সবাই বলেন, সকাল থেকে অপেক্ষা করে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি। এ সময় তারা আক্ষেপ করে বলেন, চেয়ারম্যান মেম্বারের ওপর আস্থা পাই না।
তারা অভিযোগ করেন, ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিরা তাদের পছন্দের কিংবা আত্মীয়স্বজনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। তাই আমাদের আস্থা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে সঠিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা পাবার আশায় আমরা এখানে ভিড় করছি।
উল্লেখ্য, গত রোববার উপজেলার উত্তর নিলতি গ্রামে ত্রাণের কার্ড নিয়ে মহিলা মেম্বারের ওপর হামলার ঘটনায় আব্দুর রব হাওলাদার (৪৮) নামে এক কাঠমিস্ত্রি নিহত হন।
বিগত সব বন্যার চেয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কাউখালী উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। নদীবেষ্টিত এ উপজেলায় প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বাস। ঝড়ে পাঁচ হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। গৃহহীনদের কেউ কেউ প্রতিবেশী ও স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। ৯৫ শতাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ২৫ টন চাল, ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ৮০ প্যাকেট শিশুখাদ্য, আশ্রয়ণ কেন্দ্রে ৫০০ প্যাকেট চাল, নগদ দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এমপি মহিউদ্দিন মহারাজ নিজের ব্যক্তিগত অর্থায়নে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে পাঁচ হাজার লোকের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তা করেন। সরকারিভাবে যে ত্রাণ এসেছে তা বিতরণের পর অধিকাংশ মানুষই এখনো কোনো সহায়তা পাননি বলে জানা গেছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ মনু মিয়া বলেন, ঝড়ে শতকোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে গৃহ নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্য সহায়তা চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ আসা মাত্রই সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করা হবে।
উপজেলার অনেক এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ নেই। তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে গোসল, খাবার ও রান্নার পানির। মরা মুরগি, গাছের পাতা, পশুপাখি পচে নদী-খাল ও পুকুরের পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ আসছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজল মোল্লা জানান, এ উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রী প্রতিনিয়ত বণ্টন করে যাচ্ছি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে গিয়ে তাদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করছি। যেন সঠিকভাবে তারা সহায়তা পেতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement