বিষখালীর মাঝেরচরবাসীদের আর্তনাদ থামছে না
- গোলাম কিবরিয়া বরগুনা
- ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
এবার আবারো ঘূর্ণিঝড় রেমালে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ঘরের মালামাল। তিনদিন ধরে চলতে থাকা ঘূর্ণিঝড়ে আমরা অনেক কষ্ট করেছি। রান্না করে খাওয়ার মতো কিছুই ছিল না। তিন-চারদিন না খেয়ে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া যে সময় থেকে মাঝের চরে বসবাস শুরু করেছে সেই থেকেই আমরা বিভিন্ন সময় পনিতে ভেসেছি। জলোচ্ছ্বাসে যখন ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়েছে তখন মনের কষ্টে বিষখালী নদীর মধ্যে জেগে উঠা মাঝের চরে মাঝের চরে বসবাসকারী মিনারা বেগম নয়া দিগন্তের এ প্রতিবেদকের কাছে এসব বলছিলেন। পানিতে আর কত কাল ভাসতে হবে এটাই তার প্রশ্ন।
বরগুনার মাঝেরচরের বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী মিনারা বেগম। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের তাণ্ডবে স্বজন হারিয়েছেন তিনি। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ই তার বাড়িঘর ও ফসলের মাঠ নষ্ট হয়ে ঘরের মালামাল ভাসিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের এখানে বসবাস করতে উঁচু বেড়িবাঁধ প্রয়োজন। চরে ব্লক দিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরি করলে প্রতিবছর আর সংস্কার করার প্রয়োজন হয় না। আমরাও নিরাপদ থাকতে পারব।
সরেজমিনে মাঝের চর নামক এলাকাটি ঘুরে দেখা যায়, রেমালের প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানিতে প্লাবিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলের মাঠসহ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দাদের বসতঘর। এ ছাড়া ঝড়ো হাওয়ায় সস্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে অনেকের ঘরবাড়ি।
মাঝেরচরের আরেকজন একজন বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের ঘর বিধ্বস্ত হয়ে সব মালামাল ভেসে গেছে পানিতে। তিনি বলেন, আমার কিছুই নেই সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ছেলেও বাড়িতে নেই, এখন ছেলের বউ আর নাতি নিয়ে আমার থাকার কোনো জায়গা নেই। এ ছাড়া ছেলেরও তেমন সমর্থ নেই যে নতুন করে ঘর তৈরি করবে। আমাদের চরের চারপাশে নদী থাকায় আমরা বিপদে পড়লে কেউ দ্রুত এসে আমাদেরকে সহায়তাও করতে পারে না।
বরগুনার মাঝের চর নামক এ চরটিতে ২০০৫ সাল থেকে মানুষের বসবাস শুরু হয়। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে এ চরের অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ও ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আবারো ঘরবাড়ি নির্মাণ করে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন মাঝেরচরের বাসিন্দারা। তবে প্রতিবারই প্রাকৃতিক দুর্যোগে বরগুনায় মাঝেরচরের বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেন, যেসব জায়গায় পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয়েছে এর মধ্যে কিছু জায়গায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। আবার কিছু কিছু জায়গার বাঁধ ভেঙে ও উপচে পড়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। যেসব এলাকা ঝুঁঁকিপূর্ণ রয়েছে সেখানে ইতোমধ্যে মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামতের কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া আমরা চেষ্টা করছি যাদের ঘরে খাবার নেই, ঘর ভেঙে গেছে তাদেরকে দ্রুত প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা