৯৭ বছরের আজাহার শিকদার এক জীবন্ত ইতিহাস
- আহমেদ বায়েজীদ বরিশাল
- ২৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
‘আমার ছোটবেলায় ভালো চাউলের সের আছিল ৭ পয়সা কি ৮ পয়সা। আউশ চাউল ছিলো ৩ পয়সা। একদিন চাইরডা ইলিশ মাছ কিনছি ১২ আনায়, মাছ চাইরডা আনতে আমার খুব কষ্ট হইছে। এত ওজন আছিল!’ কথাগুলোর যার তিনি আজাহার শিকদার। বয়স ৯৭ চলছে। তিনি জানান, এবারের বৈশাখে তার বয়স ৯৬ পূর্ণ হলো। বাড়ি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল গ্রামে।
আজাহার শিকদার জানান, ছোটবেলায় রুপার টাকায় লেনদেন করেছেন তিনি। এক পয়সা, আধা পয়সা ও সিকি পয়সার প্রচলন ছিল তখন। এক পয়সায় তখন অনেক কিছু পাওয়া যেত। ৫ থেকে ৭ টাকায় মিলতো বড় সাইজের গরু।
আশপাশের কয়েক গ্রামেও তার সমবয়সী কেউ নেই। বয়স আজহার শিকদারকে কিছুটা দুর্বল করলেও কাবু করতে পারেনি। এখনো প্রতিদিন বাজারে গিয়ে সদাইপাতি আনেন, ছোটখাটো চাষাবাদ নিজেই করেন।
প্রায় শর্তবর্ষী এ বৃদ্ধের স্মৃতিতে বৃটিশ শাসনের দিনগুলো এখনো তরতাজা। ১৯৪৭ এ দেশভাগ, ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলা ১৩৪৮ সনের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়সহ অনেক ইতিহাসের সাক্ষী তিনি। তিনি নিজে যেন এক জীবন্ত ইতিহাস। হারানো দিনগুলোর কথা মন করে তিনি বললেন, ‘মাছ, দুধ, ফলমূল কোনো কিছুর অভাব আছিল না। পুশকনিতে জাল একটা মারলে (ফেললে) কয়েক বেলা খাবারের মাছ পাইতাম। এখন তার কিছুই নাই।’
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে বললে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন এ বৃদ্ধ। বলেন, ‘দেখলাম উত্তর দিক গোনে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আইয়া গ্রাম ভইরা গেছে। সৈদালি খার বাড়ি, বারইনগর পোড়াইয়া আইছে। তখন আমরা ৬০-৭০ জন অজু কইরা টুপি মাথায় দিয়া বাইর হই। শুনছি পাকবাহিনী খালি মানুষ মারে।’
সুখ-দুঃখের এতসব মিশ্র অনুভূতি নিয়েই প্রতিদিন জীবন পার করছেন এ প্রবীণ। জানালেন, বয়সের কারণে কিছুটা দুর্বল হলেও কোনো অসুখ বাসা বাঁধেনি তার শরীরে। প্রতিদিন মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করেন তিনি। প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন মহল্লার মসজিদে ইতিকাফ করেন।
ছেলেদের আলাদা সংসার। স্ত্রী এখনো বেঁচে আছেন। সুযোগ পেলে চলে যান বাড়ির পাশের কামারখালী বাজারে। লোকজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, আলাপ হলে মনটা ভালো লাগে বলে জানান। সবার কাছে দোয়া চান, জীবনের বাকি সময়টুকু যেন সুস্থ থাকতে পারেন। আর ডাক এলে যেন ঈমান নিয়ে কবরে যেতে পারেন।