বিদেশে শুঁটকির চাহিদা বাড়ছে

চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের শুঁটকির চাহিদা দেশ ছাড়িয়ে এখন বিদেশে। চলতি মৌসুমের (২০২৩-২০২৪) মার্চের মধ্যেই বিদেশে নানা জাতের মুখরোচক শুঁটকি রফতানি ছাড়াল ২৮০৩.৯৪ মেট্রিক টন। এতে টাকার অঙ্কে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলো ৬৪.৭১ কোটি টাকা। অপর দিকে গত অর্থবছরের পুরো ১২ মাসে (২০২২-২০২৩) শুঁটকি রফতানি হয়েছিল ২২৬৩.৮১৮ মেট্রিক টন। আর এতে টাকার অঙ্কে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছিল ৪৫.৩৭ কোটি টাকা।
মৎস্য অধিদফতরের সিনিয়র সহকারী পরিচালক ড. মকসুদুল সুজন জানিয়েছেন, এবার মৌসুমের মার্চের মধ্যেই গত মৌসুমের শুঁটকি রফতানির পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মৎস্য অধিদফতরের সরাসরি তত্ত্বাবধায়ন ও তদারকিতে বিদেশে হিমায়িত চিংড়িসহ নানা প্রজাতির তাজা মাছ ও শুঁটকি রফতানির পরিমাণ বাড়ছে। আর এতে প্রতি বছরই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে বলে গত রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবু শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান।
এ দিকে চলতি মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া শুষ্ক ও তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় এবার চট্টগ্রামের নদী ও সাগরের উপকূলজুড়ে পশ্চিম-পটিয়ার জুলধা, চর-পাথরঘাটা, খোয়াজ নগর, পটিয়ার শিকলবাহা, বঙ্গোপসাগর আনোয়ারার রায়পুর, বাঁশখালীর শেখেরখীল, খানখানাবাদ, মহেশখালী, নাজিরার টেকনাফ কুতুবদিয়া ও সেন্ট মার্টিনসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপকূলের প্রায় দুই শতাধিক স্পটে হরেক রকম শুঁটকি তৈরির ধুম লেগেছে।

এ সব এলাকায় রোদ ও বাতাসে শুকিয়ে ছুরি, লইট্যা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, বাইল্যা, কোরাল, রূপচাঁদা, চিংড়ি, লাক্ষা, তাইল্যা, পোঁপা ও চাপিলাসহ নানা প্রজাতির মাছের শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হয়। ক্ষতিকারক কীটনাশক ও ডিটিটি ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর তৈরি করা শুঁটকির সুখ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, দেশে শুঁটকির চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে প্রতি বছর শত শত টন বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি রফতানির পরিমাণ যেমন বাড়ছে তেমনি এ খাত থেকে কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রাও আসছে। প্রতি বছর দেশে যে পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয় তার বেশির ভাগই উৎপাদন হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায়।
চট্টগ্রামে এখন শীত মৌসুম ছাড়াও বছর জুড়ে প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে ও বাতাসে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করা হচ্ছে। বিশেষ করে কক্সবাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় গড়ে উঠে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ শেড।
কর্ণফুলী উপকূলের পশ্চিম পটিয়ার চরপাথরঘাটা, ইছানগর ও ডাঙ্গার চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কেউ বাঁশের মাচাং তৈরি করে আবার কেউ পলিথিন বিছিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ রোদে শুকিয়ে তৈরি করছে শুঁটকি। আর এ কাজে শত শত নারী ও পুরুষ শ্রমিককদের শুঁটকি তৈরি করতে দেখা যায়।
ইছানগর এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীরা জানায়, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন প্রজাতির তৈরি করা শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশে রফতানি করা হয়। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, হংকং, চায়না ও তাইওয়ানের মতো দেশেও শুঁটকির কদর বড়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উপজেলা পর্যায়ে যেসব এলাকায় শুঁটকি তৈরি করা হয় সেখানে সুষ্ঠু তদারকি করা হচ্ছে এবং নারী-পুরুষ শ্রমিকদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেয়ার ফলে বর্তমানে উপকূলীয় এলাকায় তৈরি হচ্ছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে বিষমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত বিভিন্ন প্রজাতির শুঁটকি।