১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

‘এইরম গরম জীবনেও দেখছি না’

মাঠে কাজ করার ফাঁকে ক্লান্ত কৃষক পানি পান করছেন। ছবিটি গতকাল করিমগঞ্জ উপজেলার খয়রত গ্রাম থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -

দুপুরের রোদ থেকে যেন আগুনের হলকা বের হচ্ছিল। রোদে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে গায়ে ফোসকা পড়ার মতো অবস্থা। এমন গরমের মধ্যে বাড়ির সামনে খড় নাড়ছিলেন মুন্তাজ আলী (৬০)। একটু পর পর গাছের ছায়ায় এসে বসছিলেন আর হাঁপাচ্ছিলেন। রোদ থেকে বাঁচার জন্য তার মাথায় গামছা বাঁধা। গা থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছিল।
মুন্তাজ আলীর বাড়ি করিমগঞ্জের গুণধর ইউনিয়নের খয়রত গ্রামে। এ গ্রামেরই কৃষক তিনি। ছেলে সন্তান না থাকায় ধান কাটা শেষে খড় শুকানোর কাজ তার নিজেকেই করতে হচ্ছে। বাড়ির সামনেই তার সাথে দেখা। বয়সের কারণে তার কুঁচকানো মুখের চামড়া রোদে পুড়ে আরো কুঁচকে যাচ্ছিল।
মুনতাজ আলী বললেন, ‘বাবা বয়স ষাইট অইল। এইরম গরম আমি জীবনেও দেখছি না। দুইলা খেড় লাড়ছিলাম। এহন তো দেহি আমার জীবন লইয়া টানাটানি। গরমের লাগি কাম করতাম পারতাছি না। একটু কাম করি আর একটু জিরাই। শরীরের চামড়া পুইড়া যাওনের অবস্থা অইছে।’
গ্রামের সরু পাকা সড়ক ধরে হাঁটতেই দেখা সবুজ মিয়া (৩৮) নামে আরেক কৃষকের সাথে। তিনিও খড় নাড়ছিলেন, সড়কের পাশে। ঘামে তার পুরো শরীরটা ভেজা। কাজের ফাঁকে রোদে দাঁড়িয়েই ঢক ঢক করে ছোট কলসি থেকে পানি পান করছিলেন। এ প্রতিবেদককে দেখে চিৎকার করে বললেন, ‘ভাই ছবি তুলতে আইছুইন? আহারে! ছাত্তি লইয়া আয়তাইন। রইদে তো মইরা যাইবেন গা।’ কাছে যেতেই পানির কলসিটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নেইন পানি খাইন, পানি খায়া তার পরে ছবি তুলুইন, আর নিউজ করুইন। সরহার জানুক আমরা কষ্টে আছি।’
খয়রত গ্রামের সামনে দিগন্ত জোড়া হাওর। মাইলের পর মাইল ফসলি জমি। নাম ‘বড় হাওর’। সেখানে বোরো ধান উৎসবের এখনই সময়। অথচ মাঠজুড়ে কোনো কোলাহল নেই।
গ্রামের কৃষক মালফু মিয়া (৫২) জানালেন, পাঁচ দিন ধরে এই হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। দুই দিন ধরে গরমের কারণে কৃষকেরা মাঠে কাজ করতে পারছে না। সকালে কৃষকেরা নামলেও দুপুরের আগেই ফিরে আসতে হচ্ছে। মালফু বলেন, ‘জমিতে অনেক ধান পাইক্কা রইছে। কয়েক দিন হাওরে হৈ-হুল্লোর আছিন, এহন কামলারা আয়া ফিইরা যায়। কি করণ যাইব, আগে তো হেরা জীবন বাঁচাইব।’
গ্রামের সামনে থেকে নতুন একটি সড়ক চলে গেছে নিকলী উপজেলা সদরে। সড়কটির শুরু খয়রতের মোড়ে। দুপুর কিবা রাতে, শত শত রিকশা অটোর জটলা থাকে এখানে। মোড় ঘিরে গড়ে উঠেছে দোকানপাটও। গতকাল শনিবার বেলা ২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে লোকসমাগম নেই। দুইটা অটোরিকশা দাঁড়ানো। প্রচণ্ড রোদের কারণে ড্রাইভার পাশের মসজিদে বারান্দার ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছেন।
এদের একজন নাজু মিয়া (৩৬)। তিনি বললেন, ‘কোনো যাত্রী নাই। সকালে দশ টাকা দশ টাকা, বিশ টাকার দুইটা ভাড়া মারছি। এরপরে সব যাত্রী হাওয়া। গরমের কারণে কেউ বাইর হইতাছে না। কিন্তু পেট তো আর গরম মানে না। ঘরে চাউল নাই, অপেক্ষায় আছি যদি আর দুইটা ভাড়া পাই তাইলে এক কেজি চাউল নিয়া বাড়িতে যায়াম।’
মোড়ে বিশ-পঁচিশটি দোকানের মধ্যে জামাল মিয়ার মিষ্টির দোকানের শুধু ঝাঁপ খোলা। জামাল মিয়া বললেন, ‘আমার বাড়ি দূরে, নানশ্রী গ্রামে। বাকি দোকানগুলো এই গ্রামেরই। দুপুরে গরমের কারণে ক্রেতা কমে গেছে, গ্রামের দোকানদারেরা তাই বাড়িতে চলে গেছে। আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। তাই যাইনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারা জেলাতেই প্রচণ্ড গরমে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কোনো কোনো পরিবারে শিশুরা ঠাণ্ডা ও সর্দিজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রবীণেরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সচ্ছলদের কেনা শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বাইরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুতের গ্রাহকেরা জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের প্রায় সব উপজেলায় পল্লী বিদ্যুৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২০ ঘণ্টা লোডশেডিং দিচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী নদী গ্রেফতার সিরিয়ার নতুন সরকারের সাথে যোগাযোগ রাশিয়ার সিরিয়ার নতুন শাসকদের প্রতি হিজবুল্লাহপ্রধানের আহ্বান ইসরাইলের সাথে সঙ্ঘাতে আগ্রহী নন সিরিয়ার নতুন নেতা সাবেক ফুটবলার কাভেলাশভিলিই জর্জিয়ার প্রেসিডেন্ট ঘড়ির সময় বদলাতে চান না ট্রাম্প ভারতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে অস্ত্র বাংলাদেশ : ওয়েইসি সিরিয়ার বিদ্রোহীদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র খেয়ালখুশিমতো খরচ হয়েছে জলবায়ু তহবিলের অর্থ গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন : র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ আরাকানে সাড়ে ৪ শ’সেনা নিহত, জান্তার নিয়ন্ত্রণ শেষ বিপাকে রোহিঙ্গারা

সকল