১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মৈত্র জমিদার বংশের শেষ স্মৃতি চিহ্ন বিলীনের পথে

বিলীন হওয়ার পথে মৈত্র জমিদার বাড়ি : নয়া দিগন্ত -

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের শীতলাই গ্রামে অবস্থিত মৈত্র জমিদার বংশের শেষ স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়িটি বিলীন হওয়ার পথে। বাড়ির দেয়ালের ইট চুন সুড়কি খসে পড়ছে। বুকে অসংখ্য ফাঁটল ধারণ করেও বাড়িটি তার প্রাচীনত্ব ও আভিজাত্যের ছাপ বহন করছে।
চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, পাঠান শাসনামলে চাটমোহরের সমাজ গ্রাম থেকে এক মাইল উত্তরে শীতল খাঁ নামক এক ব্যক্তি গ্রামটির পত্তন করেন। কালক্রমে তার নামানুসারে গ্রামটির নামকরণ হয়ে যায় শীতলাই। পরে সে গ্রামেই স্থাপিত বাড়িটি শীতলাই জমিদার বাড়ি নামে সমধিক পরিচিত। লোকনাথ মৈত্র এ জমিদারী কিনলেও পরবর্তীতে যোগেন্দ্রনাথ মৈত্র শীতলাই গ্রামে বাসস্থান তৈরি করে বসবাস শুরু করেন।
অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ রচিত চলনবিলের ইতিকথা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, শীতলাই জমিদার বংশের গোড়া পত্তন করেন জমিদার চন্ডী প্রসাদ মৈত্র। চন্ডী প্রসাদের ছেলে জগন্নাথ মৈত্র এ বংশের দ্বিতীয় জমিদার। জগন্নাথের ছেলে লোকনাথ মৈত্র রাজশাহীতে মোকতারী করতেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে সূর্যাস্ত আইনে লোকনাথ মৈত্র আরো কিছু জমিদারি কিনে নেন। লোকনাথ হাইস্কুল তার প্রতিষ্ঠিত। তার একমাত্র মেয়ে রাজরাজেশ^ীর মৃত্যু পর তিনিও মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর পতœী সোনামনি দেবী নাটোরের বলদখান গ্রামের চন্দ্রনাথকে পোষ্যপুত্র নেন। চন্দ্রনাথ ও শরৎসুন্দরী নামক একমাত্র মেয়ে রেখে মৃত্যুবরণ করলে চন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞানদা সুন্দর দেবী পাবনার বাবুলীদহ গ্রামের সুরেন্দ্রনাথকে দত্তক নেন। তখন জমিদারি দেখাশুনা করতেন দেওয়ান কালীপ্রসন্ন বিশ^াস। কথিত আছে কালীপ্রসন্ন সুরেন্দ্রনাথকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেন। এর পর জ্ঞানদা দেবী বল্লভপুরের যোগেন্দ্রনাথ চক্রবর্ত্তীকে পোষ্যপুত্র হিসেবে লালন পালন করতে থাকেন। কালীপ্রসন্নের অপকর্মের ফলশ্রুতিতে শীতলাইয়ের জমিদারি কোর্ট অব ওয়ার্ডসের অধীনে যায়।
যাগেন্দ্রনাথ ১৯০০ শতকের প্রথম দিকে শীতলাইয়ে এ বাড়িটি নির্মাণ করেন। শীতলাই উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করেন তিনি। তার নামানুসারে গুরুদাসপুর থানার যোগেন্দ্রনগর গ্রামের নামকরণ করা হয়। যোগেন্দ্রনাথ হুগলী জেলার শ্রীরামপুর এলাকার জমিদার কিশোরী লাল গোস্বামীর মেয়ে সরলা দেবীকে বিয়ে করেন। সরলা শীতলাইয়ে বসবাস না করায় পাবনায় শীতলাই বাড়ি তৈরি করেন।
যোগেন্দ্রনাথের ছয় ছেলে ও ছয় মেয়ে রেখে মৃত্যুবরণ করলে তার প্রথম ছেলে জগদীন্দ্রনাথ মৈত্র পাবনায় ‘গান্ধী উচ্চবিদ্যালয়’ (বর্তমান সেন্ট্রাল গার্লস হাই স্কুল) প্রতিষ্ঠা করেন। তার উদ্যোগে একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, একটি ডাকঘরও স্থাপিত হয়। দীঘি সংস্কার, খাল খননসহ বাংলা ১৩৩৮ ও ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষের সময় লঙ্গরখানা খুলে জনগনের অন্নের ব্যবস্থা করেন। ১৩৬৯ বঙ্গাব্দে তার মৃত্যু হয়। দেশ বিভাগের পর এ বংশের প্রায় সবাই ভারতে বসবাস শুরু করেন।
নিমাইচড়া গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব হাসান আলী লালু জানান, এক কালে জৌলুসে ভরা ছিল শীতলাইয়ের কারুকার্য খচিত এ জমিদার বাড়িটি। বাড়ির পাশে ১০০ বিঘা আয়তনের পুকুর রয়েছে। বাড়িটি আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলা : টঙ্গিবাড়ীতে আ’লীগ নেতা গ্রেফতার ফেনীতে ভারতীয় আধিপত্যবাদ রুখতে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি চৌগাছায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক নারী নিহত শিবচরে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার ১১তম শাহাদাত বার্ষিকী পালন প্রাথমিকের শিক্ষকদের পদোন্নতির বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আব্দুল্লাহ চট্টগ্রামে টিভি বিস্ফোরণে বসতঘর পুড়ে ছাই কুয়াকাটায় সাবেক মেয়রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিএনপির সংবাদ সম্মেলন লক্ষ্মীপুরে যুবলীগের ২ নেতা গ্রেফতার বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিকে নিবন্ধন দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ নাতনিকে অপহরণে বাধা দেয়ায় নানিকে হত্যার অভিযোগ, আহত ২ ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানে চীনা প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ

সকল