২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পাবনায় গোখাদ্যের দামে আগুন ভেজালের রমরমা ব্যবসা

বেড়া বাজারে প্রকাশ্যে গোখাদ্য ভুসিতে ভেজাল মিশিয়ে রিপ্যাক করা হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

গবাদিপশু সমৃদ্ধ পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে গোখাদ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। চাষিরা কাঁচা ঘাস ও খড়ের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, ওজনেও কম দিচ্ছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভুসিসহ তিল, তিশি ও সরিষার খৈলের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে লালির দামও। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভুসিতে ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া প্রভাবশালী একটি চক্র গবাদিপশুর নকল ওষুধ তৈরি করে গ্রামের বাজারে ছাড়ছে।
খামারি আমিনুল ইসলাম, কামাল শেখ, রজব আলীসহ কয়েকজন জানান, গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা মসুর ভুসি, ৩৭ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা গমের ভুসি ও ১৫ কেজির প্রতি বস্তা অ্যাংকার ভুসি প্রকার ভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ খড় বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দরে। তিল, তিশি, সরিষার খৈল ও লালির দামও বেড়েছে। এ দিকে কোম্পানির নির্ধারিত ওজন অনুয়ায়ী প্রতি বস্তায় ৩৭ কেজি করে ভুসি থাকার কথা। অথচ প্রতি বস্তায় দুই-তিন কেজি ভুসি কম দেয়া হচ্ছে। তারা জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সেলাই মেশিন কিনে নিয়েছেন। তারা ৩৭ কেজি ওজনের প্লাস্টিকের বস্তা খুলে দুই থেকে চার কেজি ভুসি বের করে নিচ্ছেন। পরে ওই সেলাই মেশিন দিয়ে বস্তাগুলো এমনভাবে রিপ্যাকিং করছেন যা দেখে বুঝার উপায় নেই। আবার কেউ কেউ বস্তার ওজন ঠিক রাখার জন্য বের করে নেয়া ভুসির সমপরিমাণ কাঠের গুঁড়া, তুষ, পচা আটাসহ বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশিয়ে দিচ্ছেন।
এ দিকে গরুর প্রধান খাদ্য খড় কিনতে গিয়ে খামারিরা আরো বেশি প্রতারিত হন। সরেজমিনে বেড়ার কয়েকটি খড় বিক্রির স্থান ঘুরে দেখা যায়, সেখানে খড় ওজন করার দাঁড়িপাল্লা নেই। অনুমানের ভিত্তিতে বিক্রেতারা খড়ের বোঝা তৈরি করে তা খামারিদের কাছে মণ হিসেবে বিক্রি করছেন।
বেড়া বাজারের খড় বিক্রেতা সামসুল ইসলাম জানান, একসময় বিশেষ ধরনের দাঁড়িপাল্লার মাধ্যমে খড় ওজন করা হতো। এখন অনুমানের ভিত্তিতেই সেটা করা হয়। এতে দুই-এক কেজি ওজনে কম বেশি হতেই পারে। পায়না মহল্লার খামারি আজিজ মোল্লা বলেন, বাজার থেকে পাঁচ মণ খড় কিনে এনে ওজন দিয়ে দেখি প্রায় এক মণ খড়ই নেই। এই ভেজাল খড় ও ভূসি খেয়ে গাভীর দুধ কমে যাচ্ছে।
শুধু গোখাদ্যেই নয়, গবাদিপশুর চিকিৎসায় (ভেটেরিনারি) ব্যবহৃত ওষুধও নকল করা হচ্ছে এখানে। পাবনা ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার গোপন কারাখানা বসিয়ে কিছু অসাধু ব্যক্তি ব্র্যান্ডেড কোম্পানির ভেটেরিনারি ওষুধ নকল করে গ্রামাঞ্চলের বাজারগুলোতে ছেড়ে দিচ্ছে।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহা: সবুর আলী বলেন, ভেজাল গোখাদ্য ও নকল ওষুধের ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে যাদের বিরুদ্ধে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে, তারা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।


আরো সংবাদ



premium cement