ঝালকাঠিতে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে সুগন্ধা তীরের জনপদ
- ঝালকাঠি প্রতিনিধি ও নলছিটি সংবাদদাতা
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর তীব্র ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। হারিয়ে যাচ্ছে স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, সড়ক, সেতু, বসতঘর, কবরস্থানসহ ফসলি জমি। কয়েক বছর ধরে ভাঙনের তীব্রতা বাড়লেও ভাঙনরোধে এখনো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সুগন্ধা নদীর ভাঙনরোধে সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ করে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙনরোধে টেকসই প্রকল্প প্রণয়ন করা হবে। তবে কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে এর নির্দিষ্ট সময়সীমা নিশ্চিত করতে পারেনি তাঁরা। যথাসময়ে ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় ছোট হয়ে গেছে উপজেলার মগর ইউপির বহরমপুর গ্রামের মানচিত্র। ইতঃপূর্বে বিলীন হয়ে গেছে কয়েক শ’ বসতবাড়ি ও শত শত বিঘা ফসলি জমি। বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কয়েকটি জামে মসজিদ, কোটি টাকার গাছের বাগান, পুকুরের মাছসহ নানান স্থাপনা। এতে গত কয়েক বছরে নিঃস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার নদী তীরের বাসিন্দা। বাপের ভিটামাটি ও বাপ দাদার কবরের চিহ্নটুকু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে।
গত ২০২৩ সালে ৫ অক্টোবর জয়নাল আবেদীন মৃধার বাড়িঘর ভেঙে নদীতে চলে যায়, তখন তার বাড়ির সামনে জরুরি ভিত্তিতে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা ভাঙন রোধে তেমন কোনো কাজে আসেনি।
নদীর তীরের বাসিন্দা বহরমপুর গ্রামের রহমান মৃধা বলেন, আমার বাপ দাদার কবরের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যাওয়ার পথে। সব সম্পদ হারিয়েও এখন এই অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়েও হেরে যাচ্ছি আমরা। তিনি আরো বলেন, বহরমপুর মৌজায় বাপ দাদার নামে ১০০ বিঘার বেশি জমি ছিল যার প্রায় পুরোটাই নদীতে চলে গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা নাই। আমরা দ্রুত এই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
বহরমপুর গ্রামের ইউপি সদস্য মাসুম লস্কর শাহাজাদা বলেন, এ পর্যন্ত অনেকবার পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়েছে কিন্তু সরকারি কোনো সংস্থা ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে, এখন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আকুল আবেদন অতি দ্রুত বহরমপুর জয়নাল মৃধার বাড়ি, লস্কর বাড়ি এবং বহরমপুর খান বাড়ি মসজিদসহ গ্রামের অস্তিত্বটুকু রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।
তারা আরো বলেন, এভাবে চললে আগামী ৪-৫ বছরের মধ্যে বহরমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সম্পূর্ণ গ্রামটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এ ছাড়াও ভয়াবহ ভাঙনের মুখে রয়েছে খোঁজাখালি, দড়ির চর, কাঠিপাড়া, মাঠিভাঙ্গা, সরই, অনুরাগ, গৌরিপাশা, পুরান বাজার, ষাটপাকিয়া ফেরিঘাটসহ আশপাশের গ্রামগুলো। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় পৌর এলাকার দড়ির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে। একইভাবে বিলীনের পথে আছে পৌরসভার সিকদারপাড়া জামে মসজিদ ও খোঁজাখালির একটি পুরাতন মসজিদ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বহরমপুর, সিকদারপাড়া, খোঁজাখালি, কাঠিপাড়া এলাকার ৬-৭টি রাস্তা ও কয়েকটি ব্রিজ ভাঙনে অধিকাংশ এলাকা বিলীন হয়ে গেছে।
বহরমপুর গ্রামের বাসিন্দারা দুঃখ আর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা পোড়া কপাল নিয়ে জন্মেছি। সব হারিয়েছি তাতেও কষ্ট নেই কিন্তু বাবা-মা, ভাইবোন স্ত্রী, সন্তান ও পূর্বপুরুষদের কবরস্থানগুলোও সুগন্ধা নদী গ্রাস করেছে। তাদের জন্য কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়াও করতে পারি না। এ চাপা কষ্ট কাউকে বোঝানো যাবে না। একরের পর একর জমি ছিল, গোলা ভরা ধান। এখন কিছুই নেই। আমাদের খোঁজ নেয়ার কেউ নেই।
মো: আলী জানান, প্রায় এক দশক আগে নদীতে ভাঙন শুরু হলেও এখন পর্যন্ত ভাঙনরোধে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তীব্র ভাঙনে ফাঁড়ির বাজারে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
এ বিষয়ে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ভাঙন রোধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানানো হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
জেলা পাউবো প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা জানান, টেকসই নদীরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুগন্ধা নদীর চারটি স্থানে নদীরক্ষা কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। খোঁজাখালি, মগর ইউনিয়নের সুজাবাদ, ভৈরবপাশা ইউনিয়নের ঘাটপাকিয়া ফেরিঘাট এলাকা ও দপদপিয়া ইউনিয়নের তিমিরকাঠিতে চলতি বছর কাজ শুরু করা হবে। কাজগুলো শেষ হলেই এ এলাকার ভাঙন রোধ হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা