আশানুরূপ মাছ না পেয়ে হতাশ জেলে ও ব্যবসায়ীরা
- সঞ্জয় ব্যানার্জী দশমিনা (পটুয়াখালী)
- ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায় প্রধান তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেরা আশানারূপ মাছ না পেয়ে হতাশ জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। উপজেলার প্রধান দুই নদীতে মাছ না পেয়ে জেলেরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এরই মধ্যে আবার দাদন ব্যবসায়ীরা তাদের দাদনের টাকার জন্য জেলেদেরকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। জেলে পল্লী হিসেবে খ্যাত উপজেলার উপকূলীয় এলাকা বাঁশবাড়িয়া, হাজীরহাট, গোলখালী, আউলিয়াপুর, রণগোপালদী ও আলীপুরা এলাকায় এখন জেলেদের মধ্যে দাদন ব্যবসায়ীদের কারণে ভীতি ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের হাটবাজারগুলোতে দেশী প্রজাতির নানা ধরনের মাছ এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই জেলেদের জালে ধরা পড়েছে। ফলে মাছের বংশবিস্তার হয়নি। একশ্রেণীর অসাধু জেলেরা মাছ ধরতে বিভিন্ন ধরনের জাল দিয়ে অবাধে মাছ শিকার করছে। যার কারণে উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশী প্রজাতির মাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।
এ দিকে উপজেলার প্রধান তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদী ২টিতে জেলেরা জাল ফেলে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ কম পেয়ে হতাশ হয়ে তীরে ফিরে আসছে। উপজেলায় মাছের ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত আলীপুরা, বাঁশবাড়িয়া, রণগোপালদী, চরবোরহান, দশমিনা, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের নদ-নদী, খাল-বিল পুকুর ডোবা এখন মাছ শূন্য হয়ে গেছে। উপজেলার হাটবাজারগুলোতে চাষকৃত কার্প জাতীয় রুই, কাতলা, পাঙ্গাস, হাইব্রিড শিং, মাগুর এবং থাইপুঁটি, কৈ ও তেলাপিয়াসহ নানা ধরনের মাছ বিক্রি হচ্ছে। চাষকৃত মাছের কাছে দেশী প্রজাতির মাছ টিকতে না পেরে হারিয়ে গেছে।
উপজেলার জেলেরা জানায়, দারিদ্র্যের কারণে তারা মাছ শিকার করতে বাধ্য হচ্ছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে সমন্বিত মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ, কৃষি জমিতে স্বল্পমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা বন্ধ করা হলে জাতীয় মৎস্যসম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হবে। আর দেশী মাছ বিলুপ্তি হলে উপজেলার পাঁচ শতাধিক জেলে পরিবারর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাবে।
উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের মাছ ধরতে আসা শাহ আলম খাঁ, জাহাঙ্গীর ও লাল মিয়াসহ শতাধিক জেলে হতাশার সুরে বলেন, ‘নৌকা নামাতে এক থেকে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কেউ গরু-বাছুর বিক্রি করে আর কেউ ঋণ নিয়ে জাল-নৌকা নামাইছি। তয় নদীতে কোথাও মাছ নেই। গেল বছর প্রতি খেয় ২০-৩৫ কেজি কইরা বিভিন্ন প্রজাতের মাছ পাইছি। এবার দুই খেও দিয়া পাঁচ কেজি মাছ পাইছি।’ বাজারে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞা শেষে অনেকে ইলিশ কিনতে এসে না পেয়ে তারা হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া লঞ্চঘাটে মৎস্য ব্যবসায়ী মিরাজ খাঁ বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর তার অর্ধেক মাছও নদীতে পান না জেলেরা। ধারদেনা করে জাল ও নৌকা নামিয়েছেন জেলেরা। নদীতে নেমে মাছ না পেয়ে হতাশ জেলে ও আমরা মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
এ ব্যাপারে দশমিনা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার জানান, নদীর মধ্যে ছোট-বড় অসংখ্য চর জেগে ওঠায় নাব্যতা সঙ্কট ও জেলে এবং জালের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাছ কম পাওয়ার কারণ হতে পারে বলেও তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা