তিন হাজারের বেশি কবর খুঁড়েছেন মনু মিয়া
৫৩ বছরেও নেননি পারিশ্রমিক- কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
- ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
এলাকার কারো মৃত্যুর খবর পেলেই তড়িঘড়ি করে খুন্তি-কোঁদাল, দা, স্কেল আর করাত নিয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে ছুটে যান ৭৩ বছর বয়সী গোড়খোদক মো: মনু মিয়া। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে ঘোড়ার পিঠে চেপে চলেন তিনি। মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে বাঁশ কাটা থেকে শুরু করে কবর খোঁড়া শেষ করে দাফন করা পর্যন্ত সেখানেই থাকেন তিনি। দাফন শেষ হওয়ার পর আবার সব যন্ত্রপাতি ব্যাগে নিয়ে ঘোড়ার পিঠে চেপে বাড়ির পথে রওনা হন।
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার জয়সিদ্দি ইউনিয়নের আলগাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ মনু মিয়ার ঘোড়ায় চড়ে এমন উদ্দাম গতির ছুটে চলা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারেন নিশ্চিত কারো মৃত্যু হয়েছে। কবর খোঁড়ার পর মৃত ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক বা যাতায়াত খরচ নেন না তিনি। এলাকার সবার কাছে শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র মনু মিয়া পরিচিতি পেয়েছেন শেষ ঠিকানার কারিগর হিসেবে।
পাড়া পড়শীরা জানান, মনু মিয়া খুব সহজ সরল একজন ভালো মানুষ। বর্তমান সময়ে তাকে বিনা পারিশ্রমিকে পাওয়া অনেকের কাছে আর্শিবাদ স্বরুপ। অথচ এই মানুষটার নেই অঢেল টাকা-পয়সা কিংবা সম্পত্তি। কিন্তু তার নীতি-নৈতিকতায় মুগ্ধ হন সবাই। এই বুড়ো বয়সেও কোনো কিছুর বিনিময় ছাড়া সারাটা দিন তিনি যে পরিশ্রম করেন সেটা যুবক বয়সের কেউ করলেও হাঁপিয়ে উঠবেন। স্ত্রী রহিমা আক্তারকে (৫৬) নিয়ে নিজের সৎভাবে উপার্জিত অল্পকিছু অর্থ দিয়েই চলে তার ছোট সংসার।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা মনু ভাইকে দেখে আসছি সেই ছোট বেলা থেকে। তার মতো এমন মানুষ আমাদের এলাকায় জন্মেছেন এতেই আমরা গর্বিত।
মনু মিয়া কবর খোঁড়ার কাজ শুরু করেছেন ১৯৭২ সাল থেকে। নিজে পড়াশোনা না জানলেও কবর খুঁড়ে এসে অন্য কাউকে দিয়ে নিজের ডায়েরিতে সুন্দর করে মরহুমের নাম, ঠিকানা, তারিখ লিখে রাখেন যত্ন করে। তার সেই ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত তিনি তিন হাজার চল্লিশ জন মৃত ব্যক্তির কবর খুঁড়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, সাহাব উদ্দিন ঠাকুরসহ বিশিষ্ট জনদের কবরও। জীবনের বাকি সময়টুকু এভাবেই কাটিয়ে দিতে চান বলে জানান মনু মিয়া।
নিম্ন-মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের সন্তান মনু মিয়ার মা সারবানুর মৃত্যু হয় ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ। মায়ের কবর তৈরিতে অংশ নেন কিশোর মনু মিয়া। সেই থেকে শুরু। ৫৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি বিনা পারিশ্রমিকে কবর খুঁড়েন। বাবার জমি বিক্রি করে ঘোড়া কিনেছেন।
যন্ত্রপাতি তৈরি করতে খরচ হয়েছে লাখ টাকা। সংসার চলে টেনেটুনে। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে মনু মিয়া তৃতীয়। কবর খোঁড়ার কাজে বাহন হিসেবে এ পর্যন্ত তিনি চৌদ্দটি ঘোড়া কিনেছেন। আর এ জন্য বিক্রি করতে হয়েছে বাবার জমি। বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি জমি বন্ধক দিয়ে বর্তমানে চলে মনু মিয়ার সংসার। মনু মিয়ার সংসারে স্ত্রী ছাড়া আর কেউ নেই।
গোরখোদক মনু মিয়া বলেন, মানুষের দেখাদেখি শখের বশে কবর খুঁড়তে খুঁড়তে এখন এটা নেশা হয়ে গেছে। সুন্দর করে কবর খুঁড়ে দাফন সম্পন্ন করে বাড়িতে আসি। আমি স্বেচ্ছায় এ কাজটি করতে ভালোবাসি। জীবনের বাকি সময়টুকু মানুষের কবর খুঁড়েই কাটিয়ে দিতে চাই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা