২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ডুমুরিয়ায় পানির দরে বিক্রি হচ্ছে শীতকালীন সবজি

ফুলকপির পাইকারি কেজিপ্রতি মূল্য ৩ টাকা: চাষিদের মাথায় হাত
ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল বাজারে সবজি বেচাকেনা : নয়া দিগন্ত -

শীতের প্রথম দিকে সবজি চড়ামূল্যে বিক্রি হলেও বর্তমানে বাজার মনিটরিং না থাকায় সেই সবজি এখন পানির দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চাষিদের মাথায় হাত। অতিবৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেত প্রথম দিকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে তারা লোকসানের ঘানি টানছেন বলে জানান ডুমুরিয়ার আঠারোমাইল বাজারে ব্যবসায়ী ও প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিরা।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, উপজেলায় এবার সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে সবজি ক্ষেত প্রথম দিকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। আবার তারা সবজি চাষ শুরু করার কারণে সবজি দেরিতে ওঠে। এখন এই সবজি বিক্রি করতে গিয়ে তারা লোকসানের ঘানি টানছেন।
ডুমুরিয়ার চণ্ডিপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান (৪৫) বলেন, প্রতি বছর শীতকালীন সবজি চাষ করি আমি। এবারো করেছিলাম। কিন্তু প্রথম দিকে অতিবৃষ্টির কারণে আমার ২০ শতক জমিতে রোপণকৃত ফুলকপির চারা নষ্ট হয়ে যায়। পরে এক হাজার ৩০০ ফুলকপির চারা আবার রোপণ করি। এতে আমার প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এই ২০ হাজার চারার পেছনে আরো ১৫ হাজার টাকা খরচ করি। এখন সেই ফুলকপি মাত্র ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। আরশনগর গ্রামের চাষি রায়হান (২৬) বলেন, দুই বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও ওলকপি লাগিয়ে ছিলাম। সবই লস। গত বৃহস্পতিবার মাত্র তিন টাকা কেজি দরে ফুলকপি বিক্রি করেছি।

তবে প্রান্তিক চাষিরা সবজি পানির দরে বিক্রি করলেও লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। রঘুনাথপুর বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম, মোজাফ্ফর হোসেন ফুলকপি ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২০ টাকা ও ওলকপি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান।
এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুর রহমান বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। তবে চাষিদের ন্যায্যমূল্য পেতে এবং ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা একান্ত দরকার।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উৎপাদনের সাথে জড়িত এবং উৎপাদন পরবর্তী কৃষি বিপণনে অধিদফতর কাজ করে থাকে। কৃষক ফসল উৎপাদনের পর অনেক সময় এক দিকে যেমন কৃষক ন্যায্যমূল্য পায় না, অন্য দিকে ভোক্তাকেও বেশি দামে ক্রয় করতে হয়। মাঝখানে মধ্যস্বত্বভোগীরা সুবিধা নিয়ে থাকে। এ জন্য মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির জন্য মার্কেট, লিংকেজ, ভ্যালুচেইন বা কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর পার্টনার নামক একটি প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করছে। যেখানে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। এতে সবজি বিদেশে রফতানি করার সুযোগ হবে এবং কৃষক কিছুটা ন্যায্যমূল্য পাবেন।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, তথ্যটা আমাদের জানা ছিল না। আমরা অবশ্যই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবো।

 


আরো সংবাদ



premium cement