শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা
- বোরহান উদ্দিন রব্বানী শরীয়তপুর
- ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম-মংলা বন্দরের সাথে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে ২০১৯ সালে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ৩৫ কিলোমিটার চার লেনের শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণের একটি প্রকল্প অনুমোদন করে। মহাসড়কটি শরীয়তপুর মাদারীপুরসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে সংযুক্ত করবে। এতে শুধু এ অঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের সহজ সুযোগই তৈরি হবে না, পোর্ট টু পোর্ট সংযুক্তির ফলে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকেও গতিশীল করবে। কিন্তু চার বছরেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় মাত্র ২৯ কিলোমিটারের কাজ বন্ধ থাকায় মহাসড়কটি বাস্তবায়নে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ছয় কিলোমিটারের কাজ চলমান থাকলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় এবং বাড়তি বরাদ্দ ও রিটেন্ডার কাজ চলমান থাকায় দৃশ্যত ২৯ কিলোমিটারের কাজ আটকে আছে।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে শরীয়তপুর সদরের মনোহর বাজার থেকে ভেদরগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন চাঁদপুরের ইব্রাহিমপুর ফেরিঘাট পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার মহাসড়কটি সম্প্রসারণ, মজবুতকরণ, সার্ফেসিং ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণের জন্য তিনটি প্যাকেজে প্রকল্প অনুমোদন দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। ২০২১ সালে তিনটি প্যাকেজে কাজ করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ায় ঠিকাদার কাজ শুরু করতে পারেনি। এর মধ্যে মাত্র ছয় কিলোমিটার অংশের কাজ চলমান রয়েছে। জমি বুঝে না পেয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২৯ কিলোমিটারের কাজ শুরু করতে পারেনি। ফলে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রণালয় সেই কার্যাদেশ বাতিল করে দেয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে সর্বশেষ মোট ৮৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দরপত্র আহ্বান করে মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে অফিস সূত্র জানায় বাড়তি ব্যয় মেটাতে ডিপিপি সংশোধনেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার পমলাকার্তা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বাবুল খান বলেন, ২০২১ সালে সরকার মহাসড়কটির কাজ শুরু করায় আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু চার বছরেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা এখন হতাশায় ভুগছি। তারপর বর্তমান সরকারের ব্যয় সঙ্কোচন নীতির কারণে আদৌ সড়কটি বাস্তবায়ন হবে কি-না তা নিয়েও আমাদের আশঙ্কা রয়েছে।
একই উপজেলার চরভয়রা উচ্চবিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মাস্টার আলী হোসেন মাদবর বলেন, মহাসড়ক চালু হওয়ার পর থেকেই এই রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকেই আমরা চরম ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি। বৃষ্টির মৌসুমে সড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়। চার লেনের কাজ শুরু হয়েছে শুনে আমরা আশান্বিত হয়েছিলাম। কিন্তু কাজ শুরু হওয়ার চার বছরেও তেমন অগ্রগতি না হওয়ায় সড়কটি এখন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে গেছে।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের আন্তজেলা বাস চালক মৃধা বলেন, ৩০ বছর ধরে বাস ও ট্রাকের চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। শরীয়তপুর ছাড়া বাংলাদেশের আর কোনো জেলার মহাসড়কের অবস্থা এত খারাপ দেখিনি। বিশেষকরে শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক এখন যানবাহন চলাচলের প্রায় অনুপযোগী। যাত্রীদের যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়, চালকদের ঝুঁকি তার চেয়ে অনেক বেশি। আর ভারী পণ্যবাহী ট্রাক হলে তো কথাই নেই। এই সড়কে যানবাহন চালালে গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙে, চালকরাও অসুস্থ হয়ে পড়েন।
শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের জন্য বাড়তি ব্যয় ও রিটেন্ডার প্রক্রিয়ার কারণে ৩৫ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের ছয় কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি ২৯ কিলোমিটারের কাজ বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রিটেন্ডার করতে হবে। আশা করছি, সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা