প্রযুক্তির যুগেও টিকে আছে ঘানি শিল্প
- জাকারিয়া শেখ ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম)
- ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:২৫
প্রযুক্তির আগ্রাসনে অনেক প্রাচীন পেশা ও শিল্প হারিয়ে গেছে। অনেক শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। এ হারিয়ে যাওয়া একটি শিল্পের নাম ঘানি শিল্প। শিল্পটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।
এক সময় গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে গরুর ঘানি দিয়ে তেল ভাঙানোর দৃশ্যটি ছিল বেশ পরিচিত। সম্প্রতি বিদ্যুৎচালিত মেশিনের সহজলভ্যতার কারণে এ প্রাচীন শিল্পটি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তবু কিছু মানুষ তাদের পূর্বপুরুষদের এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপথজেলার মনছার আলী তাদেরই একজন। তিনি আজো তার পূর্বপুরুষের ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি ধরে রেখেছেন।
ফুলবাড়ী উপথজেলার যন্দ্রনারায়ন গ্রামের মনছার আলী (৭৫) গরুর ঘানিতে তেল ভাঙিয়ে জীবিকানির্বাহ করেন। তিনি সপ্তাহে দুই দিন ফুলবাড়ী বাজারে তার তৈরি খাঁটি সরিষার তেল বিক্রি কথরেন।
মনছার আলী জানান, ১৫ কেজি সরিষা থেকে ৫ লিটার তেল বের হয়। ঘানি ভাঙানো প্রতি লিটার খাঁটি সরিষার তেলের দাম ৪০০ টাকা হলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধŸগতির কারণে তুলনামূলক কম লাভ হয় তার। তিনি বলেন, ‘এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছি। ঘানির তেল বেঁচে ঋণের কিস্তি পরিশোধ হয় না।
ঘানি শিল্পটি টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার থেকে কোনো সহযোগিতা
পাইনি।’ তেল কিনথতে আসা কদ গ্রাথমের মাহাফুজুল হক জানান, ঘানিভাঙা তেলের রান্না করা তরকারি ও গোশতের স্বাদ, গন্ধ ও গুণগত মানই আলাদা।
উপথজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারমথ্যান শাহ আলম সোথহেল জানান, প্রযুক্তির উন্নতি গ্রামীণ ঐতিহ্যের ওপর প্রভাব ফেললেও মনছার আলীর ওপর তা পড়েনি। তিনি আপ্রাণ চেষ্টায় ঘানি শিল্প আজো টিকিয়ে রেখেছেন। তাদের মতো মানুষদের জন্য সরকারি সহায়তা ও নীতিগত উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে এ শিল্প হারিয়ে না যায়।
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, সরিষার তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যালস রয়েছে। সরিষার তেলে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মোনো-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদপিণ্ড সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি ৭০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। এছাড়া এটি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়, যা রক্তনালি সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এ কারণে সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিনামূল্যে বীজ বিতরণসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে। তবে ঘানি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা