২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ডুমুরিয়ায় নদী দখল করে প্রভাবশালীদের চাষাবাদ

ডুমুরিয়ার খর্ণিয়া সেতু এলাকায় হরি নদী দখল করে চাষাবাদ : নয়া দিগন্ত -


খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া এককালের খরস্রোতা ভদ্রা ও হামকুড়া নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল জনবসতি শহর বন্দর ও প্রশাসনিক কেন্দ্র। নদীপথেই ছিল সব যোগাযোগ ব্যবস্থা। এলাকার উৎপাদন কৃষি ও সংস্কৃতিও সৃষ্টি হয় এ নদীগুলোকে কেন্দ্র করে। পোল্ডার পদ্ধতির পর শৈলমারী, ভদ্রা ও হামকুড়াসহ অসংখ্য নদীর বুক পলিভরাট হওয়ায় চরগুলো দখল করে সেখানে চাষাবাদ শুরু হয়। উৎপাদন হয় ধান। বিলগুলোতে পরবর্তীতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদনে অযোগ্য হয়ে পড়ে। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে অর্ধাহারী অনাহারী থাকার পাল্লা ক্রমেই ভারী হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা যায়, এককালের প্রমত্তা ভদ্রা ও হামকুড়া নদী এখন ধূ ধূ মাঠ। ২৫ ও ২৭ নং পোল্ডারের সীমানা হামকুড়া নদী। ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের আমভিটা স্লুইজ গেট থেকে খর্ণিয়া ইউনিয়নের বালিয়াখালী ব্রিজের নিচে বাগমারা ভদ্রানদী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীটির নাম হামকুড়া। পোল্ডার নির্মাণের ১৫-১৬ বছরের মধ্যে নদীটি মরে যায়। খনন করেও নদীটিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। ১৯৯১-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জনগণ হামকুড়া অববাহিকায় টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) বাস্তবায়িত হওয়ায় নদীটি জীবিত হয়ে উঠেছিল ঠিকই কিন্তু টিআরএম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীটি আবারো মরে যায়।

এ নদীটি মরে যাওয়ায় বিল ডাকাতিয়া ২৭/১ ও ২৭/২ পোল্ডারের পানি নিষ্কাসনের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে। ২৫/বি, ২৭/২ পোল্ডার এবং পশ্চিম পাশে ২৬ নং পোল্ডার নিয়ে ভদ্রা নদী। ডুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের তেলিখালি মোহনা থেকে উপজেলা সদরে সালতা ও জয়খালী নদী মোহনায় মিলিত হয়েছে। কয়েকবার খননের পরও নদীকে বাঁচানো যায়নি। নদী দুইটির বুকে এখন ধান ও সবুজ ফসল।
কেশবপুর থেকে দক্ষিণে খর্ণিয়া পর্যন্ত নেমে এসেছে হরি নদী। এক সময়ের খরস্রোতা ডুমুরিয়া ও কেশবপুর সীমান্তে হরি নদী এখন নাব্যতা হারিয়েছে। নদীর দু’পাশ দখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভারশালীরা। ছোট বড় পকেট ঘের করে সেখানে মাছ ও ধান চাষ করা হচ্ছে। খর্ণিয়া ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে দেখা যায় পরিবেশ বিপর্যয়ের সেই নিদারুণ দৃশ্য।

হামকুড়া রিভার মুভমেন্ট কমিটির সভাপতি শেখ সেলিম আকতার স্বপন বলেন, নদী দখলের বিরুদ্ধে সরকারি পদক্ষেপের মধ্যেও প্রভাবশালী মহল থেমে নেই। ভদ্রা, হামকুড়া, হরি, সুক, ঘ্যাংরাইল, হাতিটানা তালতলাসহ বিভিন্ন নদীপাড়ের জায়গা দখল করে মৎস্য ঘের, ধান চাষ, অবৈধ স্থাপনা, ইটভাটা, ঘরবাড়ি, হাঁস মুরগির খামার তৈরি করা হচ্ছে। এটা এখন জাতীয় সমস্যা। সরকারিভাবে ভরাট খাল খনন করে জোয়ার-ভাটার মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফেরাতে হবে। অন্যথায় দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
এক সময়ের খরস্রোতা শিবসা শুধুই স্মৃতি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শিববাটি থেকে সোলাদান পর্যন্ত শিবসা নদী ভরাট হয়ে গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। খরস্রোতা এ নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে আনতে ও নদী খননের দাবিতে প্রায় সময় উপজেলা পানি কমিটি নদী বাঁচাও আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি জানালেও তা কাজে আসেনি।
কেন্দ্রীয় পানি কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ এ বি এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৬০’র দশকে পোল্ডার সিস্টেম চালু হলে জনগণ কিছুটা সুফল পেলেও পরবর্তীতে পলি পড়ে নদী ভরাট হতে শুরু করে। ৮০’র দশকের পর থেকে খুলনা যশোর সাতক্ষীরার শালতা, হরি, হামকুড়া, ভদ্রা, শৈলমারী, ঘ্যাংরাইল, শিবসা, কপোতাক্ষ, মরিচ্চাপ, শালিখা, তেলিগাতি, বেতনা, বাদুর গাছা, হাড়িয়াসহ শতাধিক নদ-নদী ভরাট হয়ে গেছে। এসব নদীর দুইপাশ দখল করে নিয়েছে এলাকার প্রভাবশালীরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement
আগাম জাতের আলুর ভালো ফলন, দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা কঙ্গোতে ফেরি ডুবে ৩৮ জনের মৃত্যু টানা তিন ম্যাচে ডাক, বিশ্বরেকর্ডের হাতছানি শফিকের সামনে বড় জয়ে স্বস্তি নিয়ে বছর শেষ করল রিয়াল মাদ্রিদ কুমিল্লায় মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিহত ৩ পেশাদার ও দক্ষ বাংলাদেশী নিয়োগের আগ্রহী লিবিয়া কুড়িগ্রামে সূর্য উঁকি দিলেও মিলছে না উষ্ণতা ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে পিকআপ-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে নারী নিহত বাশারকে আশ্রয় দিলেও সব সম্পদ জব্দ করেছে রাশিয়া মণিপুরে হু হু করে ঢুকছে মিয়ানমারের পাচার হওয়া অস্ত্র! রিজওয়ানের নেতৃত্বে ইতিহাস পাকিস্তানের, ঘরের মাঠে ‘প্রথমবার’ চুনকাম দ. আফ্রিকা

সকল