কালের সাক্ষী নাগরপুরে পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
- নাগরপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। টাঙ্গাইল সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে নাগরপুর উপজেলার লৌহজং নদীর তীরে ১৫ একর জায়গার ওপর জমিদার বাড়িটির অবস্থান।
জমিদার বাড়িতে ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরনো মন্দির। লোকমুখে শোনা যায়, এমন শরৎ দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা প্রতিমা কারিগররা। কালের বিবর্তনে জায়গাটা এখন নির্জন, নেই আগের সেই গৌরব ও আভিজাত্যের ছাপ, নেই প্রতিমা তৈরির কোনো ব্যস্ততা।
মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি ডিগ্রি কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। দ্বিতলবিশিষ্ট ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। তবে সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। তার পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকাজ খচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি রয়েছে। লতাপাতায় আছন্ন ভবনটির একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং আরেক অংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা পরিচালিত হচ্ছে। এই ভবনের পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা দেখা য়ায়। জমিদার বাড়ির পেছনে একটি দীঘি ও দু’টি পরিত্যক্ত কূপ রয়েছে। একটি প্রাচীর ঘেরা ভাঙা বড় কূপের দেখা মেলে, যেখানে সেকালের জমিদার গিন্নিরা স্নান করতেন। এ ছাড়া জমিদার বাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির রয়েছে। একসময় নাচে, গানে মুখর থাকত এই নাটমন্দির।
জানা যায়, নাগরপুরের সাথে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর তার পরিপ্রেক্ষিতেই পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। রামকৃষ্ণ সাহাই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জায়গা ক্রয় করে জমিদারি শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডলের দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধা গোবিন্দ এবং তারপর বৃন্দাবন চন্দ্রের তিন ছেলে- ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন এবং যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এই তিন ভাইয়ের তিনটি মহলই তিন তরফে বিভক্ত। জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত।
জমিদার বাড়িটি সংস্কার বা জমিদারদের ইতিহাস সংরক্ষণ না হওয়াতে এক দিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে বাড়িটি অন্য দিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে এর ইতিহাস।
৬০ বছর বয়েসী এক ব্যক্তি বলেন পাকুটিয়া জমিদার বাড়িগুলো অতিসত্বর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতাধীন ভুক্ত করে সংস্কার সাধন করা উচিত এবং একটি পর্যটন এরিয়া করা উচিত। নতুবা ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।