শায়েস্তাগঞ্জ ও গৌরনদীর ৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই
দুই উপজেলায় ৮৫টি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য- শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) ও গৌরনদী (বরিশাল) সংবাদদাতা
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৩
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১২টিতে নেই কোনো প্রধান শিক্ষক। অবসর, বদলি ও মৃত্যুজনিত কারণে প্রধান শিক্ষকের এসব পদ শূন্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষকের পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ১৭টি সহকারী শিক্ষকেরও পদ শূন্য রয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম।
প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য বিদ্যালয়গুলো হলো- শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম বড়চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিশাপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মড়রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পশ্চিম নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেরপুর শুকুর আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশাউড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও লাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
নবগঠিত শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা আফরোজা সুলতানা বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইশরাত জাহানের বদলিজনিত কারণে পদটি শূন্য হয়। এখানে সহকারী শিক্ষকেরও একটি পদ শূন্য রয়েছে। বিদ্যালয়ে অফিস সহায়কও নেই। সীমানা প্রাচীর নেই বিদ্যালয়ের। রেললাইনের পাশে বিদ্যালয়টি হওয়ায় সব সময় আতঙ্কে থাকি। দাফতরিক কাজে সময় দিতে হয় আমাকে। ফলে শ্রেণী কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার নূরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে গেছেন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হামিদা আক্তার চৌধুরী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। তাকে একাই অফিসের সব কাজকর্ম ও দায়িত্ব পালন করতে হয়। মাঝে মধ্যে যেতে হয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। এ সময় ছয়টি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের দায়িত্বে থাকেন মাত্র দু’জন শিক্ষক।
নিশাপট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অহিদুজ্জামান ২০২২ সালে মারা গেছেন, শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আজম অন্যত্র সরকারি চাকরি নিয়েছেন এক বছর আগে। ২০১৩ সালে জাতীয়করণকৃত কেশবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজো পায়নি প্রধান শিক্ষক।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজমত আলী বলেন, ক্লাস ও অফিসিয়াল কাজ এক সঙ্গে করা কঠিন। শিক্ষক-সঙ্কটে শিশুদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। প্রধানশিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি সরাসরি সরকারিভাবে হয়। বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিষয়েও চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সহকারি শিক্ষকের সঙ্কটও দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এ দিকে শিক্ষক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম। দীর্ঘ দিন এই বিদ্যালগুলোতে শিক্ষক সঙ্কট থাকায় ব্যাহত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১৩১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৪৬টি বিদ্যালয়ে শূন্য রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদ। এ ছাড়া সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে ৬৮টি। সব মিলে শূন্য রয়েছে ১১৪টি শিক্ষকের পদ।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, একজন শিক্ষককে দিনে প্রায় ৫-৬টি ক্লাস নিতে হয়। তারপর কোনো শিক্ষক ছুটিতে থাকলে অথবা শূন্য পদের শিক্ষকদের ক্লাসগুলোও নিতে হয় ওই কর্মরত উপস্থিত শিক্ষকদের। এতে করে কর্মরত শিক্ষকদের উপর বেশি চাপ পরায় ফলপ্রসূ হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন অভিভাবক জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অফিসিয়াল কাজে প্রায় সময় ব্যস্ত থাকায় বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারেন না। তা ছাড়া অনেক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় কম। এ ছাড়া বার্ষিক ছুটি, নিয়মিত ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পিটিআই ট্রেনিংসহ উপজেলা রিসোর্স সেন্টারে বিভিন্ন ট্রেনিংয়ে থাকছেন কর্মরত শিক্ষকরা। এমনিতেই শিক্ষক সঙ্কট তার উপর আবার ছুটি, সব মিলিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের পাঠদান নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তাছলিমা বেগম নয়া দিগন্তকে বলেন, যে সব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই এবং সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা কম, আমরা সে সব বিদ্যালয়ের তালিকা করে শিক্ষা অধিদফতরে পাঠিয়েছি। আশা করি দ্রুতই রাষ্ট্রীয় প্রক্রিয়ায় শূন্য পদগুলো পূরণ হবে।