স্বামীর পর শ্বশুরবাড়ির ঠাঁইটুকুও হারালেন শহীদ জোবায়েরের স্ত্রী
- সাজ্জাতুল ইসলাম গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
- ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫২
আমার কাছ থেকে ৫০ টাকা নিয়ে আন্দোলনে গিয়েছিলেন জোবায়ের। বলে গিয়েছিলেন চিন্তা করো না, চলে আসব। সত্যিই তিনি এলেন, কিন্তু জীবিত না, লাশ হয়ে। কথাগুলো বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ জোবাথয়ে আহম্মদের স্ত্রী মারজিনা আক্তার। গত ২০ জুলাই ময়মনসিংহের গৌরীপুরে শহীদ হন জোবায়ের আহম্মেদ। বুকে পিঠে গুলি লেগেছিল তার।
বিয়ের প্রথম বছর না পেরুতেই মারজিনা হারিয়েছেন তার স্বামীকে। এখন শ্বশুরবাড়িতেও ঠাঁই হলো না তার। স্বামীর স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে এখন তার দিন কাটে একা, বড়ই একা। মারজিনা ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের বৃ-পাচাশী গ্রামের মো: শহীদুল্লাহর মেয়ে। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের গৌরীপুর উপজেলার কলতাপাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হন মারজিনার স্বামী জোবায়ের আহম্মেদ।
গত বৃহষ্পতিবার বিকেলে শহীদ জোবায়েরের স্ত্রী মারজিনা জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর স্বামীগৃহও হারাতে হয়েছে তাকে। স্বামীর লাশ দেখে শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এ অবস্থায় শ্বশুর-শাশুড়ি তাকে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এখন তারা আর খোঁজ খবর নেন না।
মারজিনা বলেন, চার মাস চলে গেল। আমার চারদিকে শুধু অন্ধকার। স্বামী হারালাম, স্বামীর গৃহও হারালাম। বিয়ের পরে যে স্বর্ণালঙ্কার দেয়া হয়েছিল, সবই রেখে দিয়েছেন তারা। কিছ্ইু নিয়ে আসতে দেননি। আমি তো এখন শূন্য! স্বামীর সম্পদ বলতে এখন আমার কাছে আছে তার ‘বিয়ের পাঞ্জাবিটা, একটি টি-শার্ট ও একটি টাওয়েল’। মারজিনা আক্তার বলেন, শুনেছি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা অনুদান দিচ্ছে। কেউ তো আমার খবর নিলো না। কোনো সংস্থা এক টাকাও দেয়নি।
শহীদ জোবায়ের আহম্মেদের বাবা আনোয়ার উদ্দিন বলেন, আমি ছেলে হারিয়েছি। পুত্রবধূকে এখানে আমি কিভাবে রাখব? ওর তো নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবতে হবে। এটা ভেবেই ওর বাবার বাড়ি যেতে বলেছি। আমি তার পরিবারকে বলেছি, সে তো স্বামীর দেনমোহর পাবে। পরবর্তীতে বিয়েশাদী হলে তখন সহযোগিতা করা হবে। তিনি বলেন, পুত্রবধূ আমার ছেলের পাসপোর্ট চায়, ওর ভোটার আইডি কার্ড চায়। এগুলো নিয়ে সে কী করবে? এসব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ বলেন, জোবায়ের আহম্মেদের স্ত্রী এসেছিলেন। তিনি স্বামীর অংশ হিসেবে যা প্রাপ্য সেটুকু অবশ্যই পাবেন। দুই পরিবারকে নিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে গত ২০ জুলাই গৌরীপুরের কলতাপাড়ায় তিনজন শহীদ হন। তাদেরই একজন মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট গ্রামের আনোয়ার উদ্দিনের ছেলে জোবায়ের আহম্মেদ। কোটাবিরোধী প্রত্যেকটি আন্দোলনেই তিনি অংশ নিয়েছিলেন। নিজের দোকানটি পর্যন্ত বন্ধ করে তিনি চলে যেতেন আন্দোলনে।