০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১, ৪ রজব ১৪৪৬
`

দক্ষিণ-পশ্চিমের ৮ উপজেলায় বোরো চাষ অনিশ্চিত

দুই মাসের টানা বর্ষণে জলাবদ্ধতা
ডুমুরিয়ার আমভিটা গ্রামে পানির নিচে ফসলি জমি : নয়া দিগন্ত -

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৮০ ভাগ নদী পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। ফলে বিলের চেয়ে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় খুলনা যশোর ও সাতক্ষীরার ৮ উপজেলায় জলাবদ্ধতা প্রায় স্থায়ী রূপ নিয়েছে। চলতি বছর টানা দুই মাসের অতি বৃষ্টিতে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এতে আসন্ন মৌসুমে বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এক মাস পরেই বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করার কথা। কিন্তু কার্তিক মাসের তিন সপ্তাহ পার হলেও চললেও রাস্তা-ঘাট বসতবাড়িতে এখনো হাঁটু পানি। ফলে অন্তত ১৫ লাখ মানুষের খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
জলাবদ্ধতার কবলে পড়া উপজেলাগুলো হলো খুলনার ডুমুরিয়া, ফুলতলা ও পাইকগাছা, সাতক্ষীরা সদর ও তালা এবং যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরসহ রয়েছে আরো কয়েকটি উপজেলার একাংশ। এসব এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দা বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দী হয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এলাকার নদীগুলো ভরাট হয়ে বিল ডাকাতিয়া, বিল পাবলা, বরুনা, তাওয়ালিয়া, শালাতিয়া, মধুগ্রাম, শিংগা, মাধবকাটি, খড়িয়া, ঘোষড়া, সিরাশুনি, মোলাচ, গোপালপুর, শালিখা, খুকশিয়া, কুলবাড়িয়া, হরিনা, বাগডাঙ্গা, বরালিয়াসহ অসংখ্য বিলের পানি সরতে পারছে না। রাস্তা ও বসতবাড়িতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে। এ চিত্র দুই মাস ধরে চলছে। শাক-সবজি যা লাগানো হয়েছিল তার কিছুই নেই।
কেশবপুর, তালা ও ডুমুরিয়া উপজেলার ৫১টি গ্রামের পানি নরনিয়া সøুইস গেট নিষ্কাশিত হয়। এলাকার পানি নিম্ন অববাহিকায় এসে মহা প্লাবন সৃষ্টি করেছে। ফলে ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়ন, তালা উপজেলার তালা ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন এবং কেশবপুর উপজেলার বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকার জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে এক মাসেরও বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও বাড়িঘর, রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এখনো পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হয়নি। তবে পানি নিষ্কাশনের জন্য চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছেন ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে শৈলমারি গেট দিয়ে পানি সরানোর জন্য শলুয়া এলাকার তিনটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
কৃষ্ণনগরের তারক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ওই এলাকার অধিকাংশ মানুষই কৃষিনির্ভর। নানা ধরনের সবজি লাগিয়ে জীবন চলে অনেকের। কিন্তু পানির কারণে সব পচে গেছে। অনেকেই এখন অভুক্ত থাকছেন অর্থাভাবে। কেউ কেউ রান্নাও করতে পারছেন না পানির কারণে। অপর দিকে এলাকায় গো খাদ্যেরও চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
ডুমুরিয়ার সিঙ্গাইর এলাকার কৃষক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, জলাবদ্ধতার ফলে সাম্প্রতিক দুরবস্থার চেয়ে আগামী বোরো মৌসুম নিয়েই আমরা বেশি চিন্তিত।
হামকুড়া নদী খনন বাস্তবায়ন কমিটির সহসভাপতি অধ্যাপক জি এম আমান উল্লাহ বলেন, ভরাট নদী দখলমুক্তপূর্বক খনন ও জোয়ার-ভাটা করে নদী ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব।
হামকুড়া নদী খনন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সেলিম আকতার স্বপন বলেন, এবার বোরো মৌসুমে যদি ধান চাষ না করা যায় তা হলে এলাকায় মারাত্মক খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। কর্ম সংস্থানের অভাবে মানুষ অন্য এলাকায় মাইগ্রেট করবে। বিশেষ করে শিশু গর্ভবতী নারী ও বৃদ্ধরা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হবে।
বেসরকারি সংস্থা ‘উত্তরণ’ পরিচালক ও বিশিষ্ট পানি গবেষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আসন্ন বোরো মৌসুমে ধান চাষ ব্যর্থ হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৫ লাখ মানুষ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে। দেশী ও আন্তর্জাতিক সহায়তায় নদী খনন করে জোয়ার ভাটার মাধ্যমে নদীর নব্যতা ফেরাতে পারলে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো: মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, সম্প্রতি অতিবৃষ্টিতে খুলনা অঞ্চলে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এটি নিরসনে ইতোমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকসহ উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে এবং বিএডিসির মাধ্যমে ড্রকল্প তৈরির জন্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। স্বল্প মেয়াদে বিএডিসির মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৩০টি এইসপি এবং ৩০টি পাম্প চালু করা হয়েছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য শ্রীহরি, ভদ্রা ও শোলমারি নদী এবং সংযোগ খাল খননের ব্যবস্থা করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা বলেন, এর একটি সমাধান আন্তর্জাতিক পর্যায়ের। অন্যগুলো আমাদের হাতে। আমাদের হাতে যেগুলো সেগুলোর চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ডুমুরিয়া এলাকায় পাম্প বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের পাশাপাশি শৌলমারী নদীর নিচু এলাকায় খনন কার্যক্রম চলছে। বিল ডাকাতিয়ার পানি তিনটি স্থান থেকে অপসারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, বোরো মৌসুমের আগে পানি নিষ্কাশন করে কৃষি জমিগুলো উপযোগী করা সম্ভব হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
বাংলাদেশীদের ভিসা কিমানোয় ভারতে বিদেশি রোগী অর্ধেকে নেমেছে জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আদর্শবান ও মানবিক হওয়ার চেষ্টা করতে হবে : আল্লামা মাহফুজুল হক ঘনকুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল বন্ধ তড়িঘড়ি করে আর্টিকেল ৭০ তুলে দিলে এমপি কেনাবেচা শুরু হবে : রিজভী ডাকসুসহ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, ক্যাম্পাসে বিবাদের আভাস রিকেলটনের ২৫৮, দক্ষিণ আফ্রিকার রান পাহাড় ঘুরে দাঁড়ালো ম্যানসিটি, ৬৭ দিন পর তুলে নিল টানা দ্বিতীয় জয় রাতের ভোটের ৩০ জেলা প্রশাসক গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করছে সংস্কার কতটা তার ওপর জটিলতা না থাকলে মঙ্গলবার বিদেশ যাচ্ছেন খালেদা জিয়া ধ্বংসস্তুপ থেকে অর্থনীতি টেনে তোলার চ্যালেঞ্জে অন্তর্বর্তী সরকার

সকল