২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১, ১৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই মাতামুহুরীর বুকে চর

মাতামুহুরী নদীর বুকে জেগে উঠেছে চর। ছবিটি আলীকদম সদরের সেতু এলাকা থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -


বাংলাদেশের নিজস্ব নদী মাতামুহুরীর উৎপত্তি বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায়। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আলীকদমের গহিন অরণ্যে খরস্রোতা মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এ নদীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথম জেলা প্রশাসক ক্যাপ্টেন টি এইচ লুইন। ১৮৬৯ সালে তার লেখা গ্রন্থে এ নদীটির নান্দনিক বর্ণনা পাওয়া যায়।
একসময় বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেলেও মাতামুহুরীতে পানির জৌলুশ থাকত গ্রীষ্ম মৌসুমজুড়ে। এখন শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই নদীর নানান বাঁকে জেগে উঠেছে বালুচর। এতে নদীটির চিরচেনা রূপ বদলে যাচ্ছে। ক্ষীণ হয়ে আসা প্রবাহ জানান দিচ্ছে বার্ধক্য যেন ভর করছে এ স্রোতস্বিনীর বুকে। দুই দশকের ব্যবধানে নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। খরস্রোতা মাতামুহুরীর অবিরত বোবা কান্না উপলব্ধির যেন কেউ নেই।
প্রাকৃতিকভাবে মাতামুহুরী নদীর ভূমিঢাল পশ্চিমমুখী। বঙ্গোপসাগর থেকে এ নদীর দৈর্ঘ্য ১১৮ কিলোমিটার। নদীটি পাহাড়ি উপজেলা আলীকদম ও লামা আর চকরিয়া উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পড়েছে বঙ্গোপসাগরে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য তৎকালীন পূর্ব বেঙ্গল সরকার ১৮৭৮ সালে মাতামুহুরীর দু’পাশের প্রায় তিন হাজার একর বনভূমিকে সংরক্ষিত রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করে। নাম দেয়া হয় ‘মাতামুহুরী রেঞ্জ’।
পার্বত্য ও সমতলের তিন উপজেলার জনজীবনকে নানাভাবে সমৃদ্ধ ও প্রভাবিত করা মাতামুহুরী নদীর নাব্য হ্রাসের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, নদীর ঢালে তামাক চাষ ও পাহাড় ন্যাড়া করে জুম চাষকে। নতুন করে যুক্ত হয়েছে নির্বিচার পাহাড় কেটে রাস্তা নির্মাণ। এ ছাড়া রয়েছে পাথর উত্তোলন। এর বিরূপ প্রভাবে বর্ষাকালে পাহাড় ধসে মাটি ও বালি এসে ভরাট করে দিচ্ছে নদীর বুক।

নদীর নাব্যসঙ্কটে এককালের প্রমত্তা মাতামুহুরীর বুকে নৌযান চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে এখন মারাত্মক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদীর গভীর জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে উধাও হয়েছে নানা প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। জেলেদেরও আর দেখা মেলে না। নদীর ক্ষীণ প্রবাহের সাথে যেন এসব জেলের জীবনের গতিও থেমে গেছে।
মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তিস্থল আলীকদম থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ত্রিশটিরও অধিক কুম (গভীর পানি স্থল/খাদ) ছিল। বর্তমানে অধিকাংশ কুম ভরাট গেছে। এ নদীর বুকে চেলার কুম, বুজির কুম, জবদাইল্যার কুম, গোলকুম, মাকুম, তুলা সিকদার কুম, ছোট বমুর কুম, চতরমল্লার কুম, কুরইল্যার কুম, কলইঙ্গার কুম, সাবেক বিলছড়ির কুম, তেইল্যার কুম, রেপারফাঁড়ির কুম, উনাছড়ির কুম, তাঞ্জার কুম, মল্লাইয়া পাড়ার কুম, চৈক্ষ্যং মুখের কুম, পাইল্লা পাড়ার কুম, মিজ্জিরির কুম, লামার হলইঙ্গার কুম, দুইখ্যা-সুইখ্যার কুম, সীতার কুম, ইয়াংছার কুম, ফাইতংয়ের কুম, চকরিয়ার ঘুইন্যার কুম, মোস্তাক মিয়ার কুমের অস্তিত্ব এখন বিলীন। এ প্রজন্মের অনেকেই এসব কুমের কথা জানে না। স্থানীয়দের দাবি, এ নদীর বিপন্নদশা কাটাতে হলে ড্রেজিং করা জরুরি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্রেজিং করার আগে যেকোনো নদীর জরিপ দরকার পড়ে। তবে এখনো মাতামুহুরী সরকারিভাবে জরিপের আওতায় আসেনি। এ কারণে জরিপের আগে ড্রেজিং করা সম্ভব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement
২০২৫ সালের মধ্যে নির্বাচন চায় বিএনপি ও সমমনারা সাকিব-তামিমকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাওয়া যাবে : ফারুক গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকায় সিলেটের ৩১ জনের নাম পুলিশের কর্মস্পৃহা পুনরুদ্ধারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ : আইজিপি ঢাকা মেট্রোকে হারিয়ে ফাইনালে রংপুর রাজশাহীতে ওয়াসার সুপেয় পানি সরবরাহের দাবি দৌলতদিয়ায় ৭ ব্যারেল ডিজেলসহ গ্রেফতার ২ মগবাজারে ট্রেনের ধাক্কায় কিশোর নিহত কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নতুন সভাপতি আলীম, সম্পাদক জলিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ষষ্ঠ ওয়ানডে সিরিজ জয় আফগানিস্তানের সবাইকে কথা বলার সুযোগ দেয়াই সরকারের প্রধান লক্ষ্য : সুপ্রদীপ চাকমা

সকল