০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ৩ রবিউস সানি ১৪৪৬
`

চুয়াডাঙ্গায় ২২ টন ওলকচু উৎপাদনের আশা কৃষকের

অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চুয়াডাঙ্গায় বাড়ছে ওলকচু চাষ : নয়া দিগন্ত -


অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে ওলকচুর চাষ। ওলকচু সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় বাজারে এ সবজির চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। বিঘা প্রতি ওলকচু এক লাখ টাকার বেশি লাভ হওয়ায় জেলার কৃষকরা ওলকচু চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় মোট ১২১ হেক্টর জমিতে ওলকচুর চাষ হয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৬২ হেক্টর দামুড়হুদা উপজেলায় ২৯ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে ওলকচুর চাষ হয়েছে। বর্তমান এসব জমি থেকে ওলকচু তুলে হাটবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ২২টন ওলকচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে।
আলমডাঙ্গা উপজেলার বেতবাড়ীয়া গ্রামের রহিমা খাতুন জানান, তিনি আলমডাঙ্গা কৃষি অফিস থেকে ১০ শতক জমিতে ওলকচু চাষের প্রদর্শনী প্লট করেছিলেন। কৃষি অফিস থেকে ওলকচু চাষের জন্য তাকে দুই বস্তা জৈবসার, ৯ কেজি পটাশ, ৯ কেজি ড্যাপ ও দুই বস্তা ওলকচুর বীজ দিয়েছিল। চলতি মৌসুমে ওলকচুর ভালো ফলন হয়েছে। বর্তমানে ওলকচু ক্ষেত থেকে তোলা শুরু হয়েছে। প্রতি ওলকচু তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবীনগর গ্রামের জিয়াউর রহমান লাল্টু জানান, তিনি সাত-আট বছর ধরে ওলকচু চাষ করছেন। আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। এই ফসল একই জমিতে বারবার করা যায় না। দুই বছর পরপর জমি পরিবর্তন করে এই চাষ করা হয়। তার দেখাদেখি নবীননগরের অনেক কৃষক ওলকচুর চাষ করেছেন। অন্যান্য ফসলে সার লাগে, সেচ লাগে, শ্রমিক লাগে, কিন্তু ওলকচু চাষে এসবের কমই ব্যবহার হয়।

তিনি আরো জানান, তার পাঁচ বিঘা জমিতে ওলকচুর চাষ আছে। বর্তমানে ওলকচু ক্ষেত থেকে তোলা শুরু হয়েছে। এগুলো সাড়ে তিন কেজি থেকে পাঁচ কেজি ওজনের হচ্ছে। গত বছর দুই বিঘা জমিতে ওলকচু মণপ্রতি দুই হাজার ৮০০-পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এতে তার এক লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। গত বছরের মতো বাজার পেলে এবার ছয় লাখ টাকার ওলকচু বিক্রি করা যাবে।
চুয়াডাঙ্গা ওলকচু চাষে খ্যাতি অর্জনকারী ছলিম উদ্দীন বলেন, বাংলা চৈত্র মাসের শেষের দিকে ও বৈশাখ মাসের প্রথম দিকে ওলকচু রোপণ করা হয়। ওলকচু উৎপাদন বীজের আকারের ওপর নির্ভর করে। তবে বীজের যে দাম সেক্ষেত্রে নিজের বীজ না থাকলে ওলকচু চাষ করা অসম্ভব হবে। ওলকচু রোপণের সময় ১০ মণ বীজের মূল্য পড়ে ৫০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ওলকচু উৎপন্ন হয় ৭০-১০০ মণ। জমি থেকে বর্তমানে ওলকচু বিক্রি করা হয়েছে এক হাজার ৩০০- এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত। বাজারে খুচরা মূল্যে ওল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। নিজের বীজ থাকলে বিঘায় ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ পড়ে। প্রতি বিঘায় ওল বিক্রি হয় এক লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে। চলতি মৌসুমে তিনি চার লাখ টাকার ওলকচু বিক্রি করতে পারবেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহযোগিতায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে ওলকচু চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ওলকচু হেক্টরে ২১-২২ টন উৎপাদন হবে। বর্তমানে বাজার দরও ভালো। এমন দাম থাকলে চুয়াডাঙ্গার কৃষকরা ১২১ হেক্টর জমি থেকে প্রায় সাত কোটি টাকার ওলকচু বিক্রি করতে পারবেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement