২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরি
`

হাটের নাম কাইকারটেক

সোনারগাঁওয়ের কাইকারটেক হাটের ঐতিহ্যবাহী পুতা মিষ্টি : নয়া দিগন্ত -

কালের বিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ হাটের ঐতিহ্য। তবুও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের ঐতিহাসিক কাইকারটেক হাটটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। ছোট্ট মফস্বল শহরের বিশাল হাট কাইকারটেক। শুধু নিত্যপণ্যই নয়, এমন কোনো পণ্য নেই যা এই হাটে খুঁজে পাওয়া যায় না। টাটকা শাকসবজি থেকে শুরু করে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, বিভিন্ন মসলা, মাছ, গোশত, জেলেদের জাল ও জাল তৈরির সুতা, বাঁশ, কাঠ, নৌকা, লোহা ও বাঁশের তৈরি সামগ্রী, গৃহনির্মাণে কাঠ, পোশাক, বই, খাতা কী নেই এখানে? পুরনো দিনের হাটের সব বৈশিষ্ট্য এখানে রয়েছে। সপ্তাহে শুধু রোববার এখানে হাট বসে। সেই ভোরে হাট শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যাবেলা।
আদি ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এই হাটটির চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই অপরূপ। এ হাটের প্রাচীনকালের কড়ই ও হিজল গাছগুলো যেন হাটের ২০০ বছরের বয়সকালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রায় ৪০ বিঘা জমিবিস্তৃত এ হাটটি এখন অনেক ছোট পরিসরে চলে এসেছে।
উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের কাইকারটেক গ্রামে অবস্থিত কাইকারটেক হাট। এখানে বিক্রি হয় হাসেম মিয়ার বিশেষ ঝালমুড়ি, বুট, পিয়াজু, নিমকি, চানাচুর, মোয়াসহ নানা ধরনের লোকজ খাবার। এ ছাড়াও অনেক পদের মাছের শুঁটকিও এখানে খুব নামকরা। এখানে বাঙালি, শিবাজী, ময়ূরপঙ্খীসহ দামি দামি কবুতরও পাওয়া যায়। কোষা নৌকা, পোতা মিষ্টি, কাঠ, বাঁশ ও কৃষিজাত পণ্যের জন্য কাইকারটেক হাট নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় সুপরিচিত।
এই হাটের অন্যতম আকর্ষণ বিশেষ ধরনের মিষ্টি। সাধারণ মিষ্টির চেয়ে ওজনে এই মিষ্টি চার-পাঁচগুণ বড় এবং স্বাদে অতুলনীয়। একেকটি মিষ্টির ওজন এক থেকে দুই কেজি হয়ে থাকে। দেখতে অনেকটা শিলপুতার মতো বলে একে ‘পুতা মিষ্টি’ বলা হয়। ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় পুতা মিষ্টি। পুতা মিষ্টি ছাড়াও এই হাটে তালের রসা, কালোজাম, রসগোল্লা, জিলাপি, মোহনভোগ, লালভোগ, বালুশাহ্সহ নানা পদের মিষ্টি পাওয়া যায়।
হাটের আরেকটি বিশেষ পণ্য হচ্ছে কোষা নৌকা। বছরজুড়ে হাট বসলেও বাংলা সনের আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশি^ন এই চার মাসই হাটে নৌকার দেখা মিলে। কম দামে ভালো মানের কোষা নৌকা বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ কাইকারটেক হাটে নৌকা কিনতে ভিড় জমায় নারায়ণগঞ্জের আশপাশ জেলার নৌকার শত শত ক্রেতা।
হাটে আগত কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়। তারা জানান, এই হাটটিতে সব জিনিসপত্রই পাইকারি দামে পাওয়া যায়। অনেক ব্যবসায়ী এখান থেকে জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যায় তাদের দোকানে বিক্রি করার জন্য।


আরো সংবাদ



premium cement