২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

‘৫১ জনকে হত্যা করার পরও হত্যাকারী বেঁচে থাকার সুযোগ পাওয়ায় আমরা মনক্ষুণ্ণ’

- সংগৃহীত

গত বছরের মার্চে নিউজিল্যান্ডে ক্রাইস্টচার্চের দু'টি মসজিদে বন্দুক হামলা চালানো ব্রেন্টন টারান্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ঐ হামলার ভুক্তভোগী বাংলাদেশী নাগরিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

গত বছরের ১৫ই মার্চ জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের দু'টি মসজিদে বন্দুক হামলা চালান ২৯ বছর বয়সী ব্রেন্টন টারান্ট, যেই হামলায় নিউজিল্যান্ড প্রবাসী ৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক সহ ৫১ জন মারা যান, আহত হন আরো অনেকে।

ঐ ঘটনায় ব্রেন্টন টারান্টকে নিউজিল্যান্ডের আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হয়েছে। তবে আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হলেও সেদেশের আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান না থাকায় কেউ কেউ কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
যেরকম বলছিলেন বাংলাদেশের নাগরিক বাবুল। তার স্ত্রী আফসানা আক্তার রিতু হামলার দিন একটি মসজিদের ভেতর ছিলেন। তবে তিনি বেঁচে যান।

মি. বাবুল বলেন, "একটা মানুষ ৫১ জনকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করার পরও কীভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়? আমরা এই রায়ে কিছুটা মনক্ষুণ্ণ।"

তিনি জানান, ঐ ঘটনার পর এক মাসেরও বেশি সময় তার স্ত্রী ঘর থেকে বের হননি। সবসময় দরজা জানালা বন্ধ করে রাখতেন।

"আমার স্ত্রী এখনও পুরোপুরি ঐ আতঙ্ক থেকে বের হতে পারেননি। মনে হয় না কখনো পারবেন।"

তবে মি. বাবুলের মত রায়ে অসন্তোষ নেই সব ভুক্তভোগীর।

আল নূর মসজিদে বন্দুক হামলায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন ওমর জাহিদ। এখনও শারীরিকভাবে শতভাগ সুস্থ হতে পারেননি তিনি। তার কয়েকজন সহপাঠী এবং পরিচিত ব্যক্তিও সেসময় হামলায় মারা গিয়েছিলেন।

নিউজিল্যান্ডের আইন অনুযায়ী ব্রেন্টন টারান্টের হওয়া শাস্তির সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তিনি বলেন, "দোষীকে যদি মৃত্যুদণ্ড দেয়াও হতো, তাহলেও তো আমার মারা যাওয়া বন্ধুরা, পরিচিতরা ফিরে আসতো না। আমার মত যারা আহত হয়েছেন, তারা তো আর সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাবে না।"

"যেহেতু নিউজিল্যান্ডের আইনের সর্বোচ্চ সাজাটাই তাকে দেয়া হয়েছে, তাই আমি সন্তুষ্ট। আমার মনে হয় যে সুবিচারই হয়েছে।"

রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ঐ হামলায় প্রাণ হারানো হোসনে আরা ফরিদের স্বামী ফরিদ উদ্দীন আহমেদ।

ঐ ঘটনার কয়েকদিন পরই ফরীদ উদ্দীন আহমেদ গণমাধ্যমের কাছে বলেছিলেন যে হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্টকে তিনি এবং তার পরিবার মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, যেই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি তিনি করেছেন হামলাকারী টারান্টের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও।

ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বলেন, "হামলাকারীকে আমি এবং আমার মেয়ে ক্ষমা করতে পেরেছি বলেই এখন আমরা মানসিকভাবে শান্তিতে রয়েছি বলে আমার বিশ্বাস। এখন হামলাকারীকে শাস্তি দেয়া হলেও আমার মানসিক পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।"

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া মি. আহমেদ হামলার কিছুদিন পর দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, তার এবং অন্যদের জীবন বাঁচাতে সেদিন তার স্ত্রী হোসনে আরা নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন।

নিউজিল্যান্ডের বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই প্রথমবারের মত নিউজিল্যান্ডে প্যারোল ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হলো। হামলাকারী ব্রেন্টন টারান্টকে আমৃত্যু কারাগারে থাকতে হবে। সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement