জেসিন্ডাকে নোবেল পুরস্কার দেয়ার দাবি
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ২৩ মার্চ ২০১৯, ১৪:৩০
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্নের ভূমিকা পুরো বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং সন্ত্রাস মোকাবেলায় তার তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণ এত বড় একটি ঘটনার পরও পুরোপুরি শান্ত ছিল দেশটি। কোথাও থেকে পাল্টা হামলা-হুমকি-দাঙ্গা ইত্যাদির খবর পাওয়া যায়নি। সময়োপযোগী ও যথাযথ এসব উদ্যোগের স্বীকৃতিস্বরূপ দাবি উঠেছে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদানের। এরজন্য এরইমধ্যে এ জন্য দুটি পিটিশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড জানায়, চারদিন আগে Change.org নামের একটি ওয়েবসাইটের পক্ষ থেকে এ পিটিশন করা হয়। এ সময়ের মধ্যে এ দাবির পক্ষে তিন হাজারের বেশি স্বাক্ষর নিবন্ধিত হয়েছে। ফ্রান্সের ওয়েবসাইট AVAAZ.org এর পক্ষ থেকে করা হয় অন্য পিটিশনটি। এ পিটিশনে বলা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদের ওই মর্মান্তিক ঘটনার পর নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে তাৎক্ষণিক, যথাযথ, স্পষ্ট ও শান্তিপূর্ণ সাড়া দিয়েছেন সে কারণে আমরা তাকে আসন্ন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে দেখতে চাই। এ পিটিশনেও সংগ্রহীত হয়েছে সহস্রাধিক স্বাক্ষর।
সন্ত্রাসী হামলার পরের ঘটনাগুলোতে দেখা গেছে, জেসিন্ডা আরডার্ন খুবই শান্ত ছিলেন। সেই সাথে দৃঢ়তার সাথেই প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। শান্ত ও দৃঢ়তার আশ্চর্য সমন্বয় দেখা গেছে তার মধ্যে। আর তার এই প্রতিক্রিয়া পুরো বিশ্ব সম্মানের সাথে গ্রহণ করেছে এবং তার সাথে সহমত প্রকাশ করেছে। দেশের ভেতর বা বাইরে কোনো জায়গা থেকেই তার কোনো সমালোচনা পাওয়া যায়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, অনেক দেশে এসব ঘটনাকে ভিত্তি করে রাজনীতি করা হয়। নিজেদের স্বার্থে এসব ইস্যুকে তারা ব্যবহার করেন। কিন্তু জেসিন্ডা ছিলেন এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তার সবগুলো পদক্ষেপ ছিল সাধারণ মানুষের জন্যই। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে এখন আওয়াজ উঠছে, আমাদের জেসিন্ডার মতো একজন নেতা প্রয়োজন।
গত ১৫ মার্চ জুমার নামাজের সময় আল নুর ও লিনউড মসজিদে হামলা চালায় ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয় নাগরিক ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। এতে ৫০ মুসল্লির প্রাণহানি ঘটে। এ হামলায় আরও অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
ব্রেন্টনের ওই হামলার পর দেশের মানুষ মুসলিমদের পাশে এসে দাঁড়ায়। নিউজিল্যান্ডের সরকার কোনোপ্রকার রাখঢাক ছাড়াই মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন যেভাবে বারবার করে হামলার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, মুসলিম নারীদের সাহস জুগিয়েছেন তা এক কথায় অনন্য। তিনি নিজে মুসলমানদের মতো করে হিজাব পরেছেন, পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু করেছেন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে, এমনকি পার্লামেন্টে নামাজেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। পাশাপাশি সপ্তাহ পেরুনোর আগেই হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র নিষিদ্ধের আইন পাস করেন। জেসিন্ডার এসব ভূমিকা বিশ্বব্যাপী ব্যাপক প্রশংসিত হয়।
এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলেই কি জেসিন্ডা নোবেল পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য? এক্ষেত্রে জেসিন্ডার যেসব ইতিবাচক দিক উঠে আসছে সেগুলো হচ্ছে-
প্রথমত তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর রীতি পাল্টে দিয়েছেন। ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এর নিন্দা জানিয়ে ওই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা বলে আখ্যায়িত করেছেন।
দ্বিতীয়ত তিনি হামলাকারীর চেয়ে ঘটনাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি হামলাকারীর নাম একটিবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি। বরং তার সব ব্যস্ততা ছিল ওই ঘটনার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নিয়ে।
তৃতীয়ত তিনি নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিকে দ্ব্যর্থহীনভাবে সমর্থন করেছেন। বেশ কয়েকবার হতাহতদের পাশে গিয়ে তাদের সাথে সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেন। প্রটোকল দূরে রেখে তাদের একেবারে কাছে চলে গেছেন। মুসলিম সম্প্রদায়কে সম্মান জানাতে হিজাব পড়েছেন। পার্লামেন্টে কথা শুরুর আগে সালাম দিয়েছেন।
চতুর্থত তিনি ওই সময় বেশ কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ওই হামলার পরপরই স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিষিদ্ধ করেছেন।
পঞ্চমত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ব্যাপারে সাহসী ও দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া নৃশংস ভিডিওগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। সামাজিক মাধ্যমগুলোকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, সবকিছু লাভের জন্য করা উচিৎ নয়, দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ।
ষষ্ঠত শুধু এখনই নয়, বরং সবসময়ই তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন তিনি। এছাড়া চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের অত্যাচারের বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের মাত্র তিনজন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন- ১৯০৮ সালের রসায়নে আর্নেস্ট রাদারফোর্ড, ২০০০ সালে রসায়নে অ্যালান ম্যাকডিয়ারমিড এবং ১৯৬২ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে মরিস উইলকিন্স।