২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

হীরার দেশে সোনালী রাজা

হীরার দেশে সোনালী রাজা - ছবি : সংগৃহীত

আফ্রিকান দেশ বোতসোয়ানা। দেশটির বেশিভাগ অঞ্চলই মরুভূমি। ২.৪ মিলিয়ন জন সংখ্যার এই দেশটি বিশ্বের মানচিত্রে পরিচিত সবচেয়ে বেশি হীরা উৎপাদনের জন্য। বৃহস্পতিবার পরশু বিকেলটা দারুণ আনন্দে কেটেছে দেশটির নাগরিকদের। আর দেশের প্রেসিডেন্ট মগওয়েস্টি মাসিসিতো শুক্রবার আধাবেলা সরকারি ছুটিই ঘোষণা করেছেন।

কারণ লেটসিলে টেবোতো। প্যারিস অলিম্পিক গেমসে পুরুষদের ২০০ মিটারে স্বর্ণ জিতে ইতিহাসের পাতায় চলে গেছেন ২১ বছরের টোবোগো। এই স্প্রিন্টারই দেশটিকে এনে দিয়েছেন প্রথম অলিম্পিক স্বর্ণ। অর্থাৎ হীরার দেশে স্বর্ণ জয়ী রাজা। শুধু তাই নয়, তিনিই প্রথম আফ্রিকান যার গলায় উঠল অলিম্পিকের ২০০ মিটারের স্বর্ণ। এর আগে বোতসোয়ানার প্রতিবেশী দেশ নামিবিয়ার ফ্র্যাকিং ফেডেরিখস ২০০ মিটারে ১৯৯২ বার্সেলোনা এবং ১৯৯৬ সালের আটলান্টা অলিম্পিকে রৌপ্য জিতেছিলেন। আর প্যারিস অলিম্পিকে টেবোগোর এটি দ্বিতীয় পদক।

পাঁচ দিন আগে ১০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন তিনি। ১৯.৪৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে ২০০ মিটারে স্বর্ণ জেতেন টেবোগো। ১৯.৬২ সেকেন্ডে যুক্তরাস্ট্রের কেনি বেডনারেক পান রৌপ্য। তৃতীয় হয়েছেন প্যারিস অলিম্পিকের দ্রুততম মানব যুক্তরাস্ট্রের নোয়াহ লাইলেস। তার টাইমিং ১৯.৭০ সেকেন্ড।

ব্যাপক হাঁকডাক ছিল নোয়াহ লাইলেসকে নিয়ে। গত বছর বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০, ২০০ মিটার এবং ১০০ মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয়ের পর প্যারিসেও ট্রেবল জয়ের ঘোষণা দেন। চলমান অলিম্পিকে ১০০ মিটারে স্বর্ণ জিতে দ্রুততম মানব হয়ে যেন আকাশে উড়ছিলেন। জানান দেন, তিনি এই অলিম্পিকেও তিন স্বর্ণ জিতবেন। ছুঁয়ে ফেলবেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্টের এক ইভেন্টে এই তিন স্বর্ণ জয়ের রেকর্ডকে। অথচ এই মার্কিন অ্যাথলেটকে একটি স্বর্ণ আর একটি ব্রোঞ্জ জিতেই দেশে ফিরতে হচ্ছে। ১০০ মিটার রিলেতে অংশই নিতে পারছেন না। তার করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে। এই করোনরা জন্যই ২০০ মিটারে ঠিকমতো দৌড়াতে পারেননি তিনি, ফলে হয়েছেন তৃতীয়।

দৌড় শেষ করেই পড়ে যান। এরপর স্ট্রেচারে ট্র্যাক ত্যাগ করতে হয়। শরীরে কোভিড-১৯ জীবানু থাকায় তার অংশ নেয়া হচ্ছে না ১০০ মিটার রিলেতে। ২০০ মিটারের সেমিফাইনালে অবশ্য লাইলেসকে পেছনে ফেলেছিলেন টেবোগো। টেবোগো প্রথম ও লাইলেস দ্বিতীয় হন।

লাইলেস বলেন, ‘আমি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে উঠার পর দেখলাম শরীরের অবস্থা খারাপ। এরপরও ডাক্তারের কাছে গিয়ে টেস্ট করাই। সেখান থেকে গিয়ে দৌড়ে অংশ নেই। এরপর আসে করোনা পজিটিভের রেজাল্ট।’

২০২১ টোকিও অলিম্পিকেও ২০০ মিটারে ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন লাইলেস। পদক জয়ের পর আরো বলেন, ‘আমি গত অলিম্পিকে সবাইকে হতাশ করেই ব্রোঞ্জ জিতেছিলাম। এবারও এই পদক। এতে গর্বিত হওয়ার কিছই নেই।’

১৯৮০ সালের মস্কো অলিম্পিকে অভিষেক বোসতোয়ানার। সেবার দেশটির ৮০০ মিটার দৌড়ে রৌপ্য জয় করে নিজেল এমোসের কল্যাণে। এরপর টোকিও অলিম্পিকে পুরুষদের ৪০০ মিটার রিলেতে জয় করে ব্রোঞ্জ। এবার স্বর্ণ জিতে লাইলেসের সমালোচনা করে টেবোগো জানান, ‘আমি লাইলেসের মতো আগ্রাসী নই। তার মতো জোরে কথাও বলি না।’

টেবোগোর সামনে এখন চার শত মিটার রিলেতে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন। ইতোমধ্যেই তার নেতৃত্বে বোতসোয়ানা দল রিলের ফাইনালে উঠেছে।

এদিকে মেয়েদের ৪০০ মিটার হার্ডলসে ৫০.৩৭ সেকেন্ডে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জয় করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিডনি ম্যাকলাফিন লোভরেন। ২০২১ সালে টোকিওতে অলিম্পিক রেকর্ড গড়ে স্বর্ণ জয়ের পর গত জুনে গড়েছিলেন বিশ্ব রেকর্ড। এবার নিজেই ভাঙলেন নিজের বিশ্ব রেকর্ড। রৌপ্য পেয়েছেন মার্কিন অ্যাথলেট আনা ককরেল। আর ব্রোঞ্জ গেছে নেদারল্যান্ডসের ফোমকে বোলের দখলে।


আরো সংবাদ



premium cement