মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে তালেবান ক্ষমতা দখল করতে পারে : ট্রাম্প
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৮ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৩, আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২০, ০৯:৪৯
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের প্রত্যাহারের পর তালেবানরা দেশটির ক্ষমতা দখল করতে পারে। গত শুক্রবার হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এই মন্তব্য করেন তিনি। গত সপ্তাহে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হবে। কাতারের রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুসারে, আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।
ট্রাম্প বলেন, দেশগুলোকে নিজেদের রক্ষার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। কিছু সময়ের জন্য আপনি অন্যের হাত ধরে থাকতে পারেন। তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আফগান সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করতে পারে কি না জানতে চাইলে ট্রাম্প বলেন, এটি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু হওয়ার যথেষ্ট সুযোগ আছে। আমরা সেখানে আগামী ২০ বছর থাকতে পারি না। আমরা গত ২০ বছর ধরে সেখানে আছি এবং আমরা দেশটিকে রক্ষা করে আসছি। কিন্তু আগামীতে আমরা থাকতে পারছি না। ফলে তাদের সুরক্ষা তাদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।
গত মঙ্গলবার তালেবানের সিনিয়র নেতার সাথে ভালো ফোনালাপ হওয়ার কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, বিদেশী সেনা প্রত্যাহারের পর আফগান সরকার নিজেকে রক্ষা করতে পারবে কি না তা সম্পর্কে তিনি জানেন না। ট্রাম্প বলেন, আমি জানি না, আমি এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না। কী ঘটে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
নতুন বিশেষ অপারেশন নেটওয়ার্ক
এ দিকে আফগানিস্তানে একটি নতুন স্পেশাল অপারেশন্স বাহিনীর নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। তালেবানের সাথে করা শান্তিচুক্তি যদি ভেঙে পড়ে তা হলে এটিই দেশটিতে মোতায়েন অপেক্ষাকৃত ছোট মার্কিন সামরিক মিশনের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করবে। সামরিক কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন। নেটওয়ার্কটি প্রতিষ্ঠা করেছেন আফগানিস্তানে শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল অস্টিন মিলার। তালেবানের সাথে মার্কিন সেন্য প্রত্যাহার নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের আলোচনার প্রেক্ষাপটে কোয়ালিশন ও আফগান বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে মার্কিন সেনা হ্রাস করেও সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন।
এক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা বলেন, বাহিনীটি নীতিগত যেকোনো পরিবর্তন প্রতিরোধ করতে পারবে। তবে তিনি বিষয়টি স্পর্শকাতর বিবেচনা করে নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে চাননি। তিন জানান, বাহিনীটি কোয়ালিশন পার্টনারদের সাথে কাজ করবে। নেটওয়ার্কটির কথা আগে কখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, সেনা হ্রাস করা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতেও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে পারবে- যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান নাগরিকদের এমন আশ্বাস প্রদান করার জন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তালেবানের সাথে ২৯ ফেব্রুয়ারি যে চুক্তি হয়েছে, তার আলোকে ১৩৫ দিনের মধ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ১২ হাজার থেকে কমিয়ে ৮,৬০০ করা হবে। নেটওয়ার্কে কতজন সম্পৃক্ত থাকবে, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য দেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে ওই সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক হাজার মার্কিন সেনা কাজ করতে পারে, এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তালেবানের সাথে এক বছরের বেশি সময় আলোচনার পর যে চুক্তি হয়েছে তাতে মার্কিন বাহিনীকে ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে হবে। তবে তালেবানকেও কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম দু’টি বিষয় হলো যুদ্ধ অবসানের জন্য আফগান সরকারের সাথে আলোচনা করা, আফগানিস্তানের মাটি যাতে কোনো সন্ত্রাসী বাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, এই সময়সূচি খুবই উচ্চাভিলাষী। তালেবান তাদের শর্ত পালন করবে না বলে তাদের সন্দেহ রয়েছে। তারা বলছেন, মার্কিন প্রত্যাহার শর্তসাপেক্ষ। গত বুধবার অনিশ্চয়তা আরো বেড়ে যায় ৪৩টি তালেবান হামলা ও তাদেরকে টার্গেট করে পরিচালিত একটি মার্কিন বিমান হামলায়। হেলমন্দ প্রদেশে ওই মার্কিন বিমান হামলাটি হয় সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হওয়ার ১১ দিন পর। তবে সেনাবহিনীর জেনারেল, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান মার্ক মিলে এসব হামলাকে বড় করে দেখতে চান না। তালেবানের সাথে সন্ত্রাস দমন চুক্তিটি প্রকাশ করা হয়নি। তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এস্পার বৃহস্পতিবার বলেছেন, চুক্তিটি সন্ত্রাস দমনের কাজে সাহায্য করবে।
তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্র তার সম্পর্ক কতটুকু পরিবর্তন করবে তা নিয়ে ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র নতুন যে নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে তার কেন্দ্রে রয়েছে কম্বাইন্ড সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস রুম বা সিএসএআর। এটির অবস্থান কাবুলে। এতে আফগানিস্তান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। তারা তালেবান ও ইসলামী স্টেটের হামলার তথ্যও সংগ্রহ করে থাকে। গত জুনে এই নেটওয়ার্ক প্রথম বড় ধরনের কাজে অংশ নেয়। রমজান মাসের পর তালেবান হামলার মুখে হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক নেটওয়ার্কটি বেশ ফলপ্রসূ বলে মনে হয়। সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট ও আলজাজিরা