মিয়ানমারে জরুরি অবস্থার মেয়াদ আবারো বাড়ল
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:৪৭
গৃহযুদ্ধের কবলে পড়া মিয়ানমার জরুরি অবস্থার মেয়াদ আরো ছয় মাস বেড়েছে। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখলের চার বছর পূর্তিকে সামনে রেখে দেশটির জান্তা সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে।
শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা ও সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক কাউন্সিল সর্বসম্মতিক্রমে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
সামরিক জান্তার তথ্য দফতর আরো জানিয়েছে, দেশটির ২০০৮ সালে রচিত সংবিধানের ৪২৫ ধারা অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মিয়ানমারের সংবিধান মতে, জরুরি অবস্থা চালু থাকাকালীন নির্বাচন আয়োজন করা যায় না।
এর আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ২০২০ সালের নির্বাচনে অযৌক্তিক জালিয়াতির অভিযোগ তুলে ক্ষমতা দখল করে।
ওই নির্বাচনে অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছিল। অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিরোধিতা দমন করতে হিমশিম খাওয়ায় জান্তা একাধিকবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে। এই বিরোধিতায় প্রতিষ্ঠিত জাতিগত সংখ্যালঘু সশস্ত্রগোষ্ঠী ও নতুন গণতন্ত্রপন্থী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স অন্তর্ভুক্ত।
মিয়ানমারে সেনা প্রণীত ২০০৮ সালের সংবিধান অনুসারে, জরুরি অবস্থা প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের তথ্যানুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর থেকে সামরিক বাহিনী ও এর বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ২৭ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
সামরিক অভ্যুত্থানের চার বছর
২০২০ সালে ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সুচির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে কারচুপির অভিযোগে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী। ওই নির্বাচনে সুচির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করেছিল।
জান্তার ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে মিয়ানমারের ১০ বছরের 'পরীক্ষামূলক' হিসেবে বিবেচিত গণতন্ত্রের অবসান ঘটে। ক্ষমতা দখলের পর বেশ কয়েকবার জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়িয়েছে সামরিক বাহিনী। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই হচ্ছে।
অপরদিকে, সুচির সমর্থক ও দেশের অন্যান্য ভিন্নমতাবলম্বীরা একজোট হয়ে জান্তার বিরুদ্ধে সামরিক সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি ও পিপলস ডিফেন্স ফোর্সসহ অন্যান্য সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর তুমুল লড়াইয়ের মুখে হিমশিম খাচ্ছে জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বাধীন সামরিক জান্তা। রাখাইন রাজ্যের দখল এখন কার্যত আরাকান আর্মির হাতে।
দেশের অন্যান্য অংশেও ভূখণ্ডের দখল হারিয়েছে জান্তা। বিদ্রোহ দমন করতে চীনের শরণাপন্ন হয়েও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি হ্লাইং।
জাতিসঙ্ঘের হুঁশিয়ারি
বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘের তদন্তকারীরা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছে, গত চার বছরে সামরিক জান্তার নেতৃত্বে মিয়ানমারে গুরুতর আকারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। তারা আশঙ্কা করেন, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা না হলে এ ধরনের সহিংসতা আরো বাড়বে।
জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমার বিষয়ক নিরপেক্ষ তদন্ত দলের প্রধান নিকোলাস কৌমিজিয়ান জানান, ‘দায়মুক্তির কারণে মিয়ানমারের অপরাধীরা আরো সহিংসতায় জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন।’
তিনি আরো জানান, সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই মানবিক সঙ্কটে আছে মিয়ানমার।
সূত্র : আল-জাজিরা ও প্রেস টিভি
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা