১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১ মাঘ ১৪৩১, ১৪ রজব ১৪৪৬
`

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন গ্রেফতার

- সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিশংসিত প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গ্রেফতার করেছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী কর্তৃপক্ষ। ঐতিহাসিক এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশটিতে এই প্রথম দায়িত্বে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতার করা হলেন।

এর আগেও তাকে একবার গ্রেফতারের চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে সেবার তা সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের এই চেষ্টায় তাকে আটক করার খবর নিশ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি গাড়িবহর তার বাসভবন থেকে বেরিয়ে গেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম খবর দিয়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে, এই বহরেই প্রেসিডেন্টকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

তবে এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল বলেছেন, তিনি দুর্নীতি তদন্ত অফিসে (সিআইও) উপস্থিত হতে সম্মত হয়েছেন। এই সংস্থাই তার বিরুদ্ধে করা মামলার নেতৃত্ব দিচ্ছে।

তিন মিনিটের এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেন, ‘অপ্রীতিকর রক্তপাত এড়াতে আমি সিআইওতে হাজির হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদিও এটা একটি অবৈধ তদন্ত। দেশের আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। তদন্তকারী সংস্থা কিংবা আদালত কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি। যদিও এখন অন্ধকার সময়... দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি আশাবাদী।’

একইসাথে দেশের নাগরিকদের প্রতি শুভকামনা জানিয়ে তিনি তাদের শক্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে তদন্তকারীরা প্রেসিডেন্ট কম্পাউন্ডে প্রবেশের পর সামনে অনেক বিক্ষোভকারী জমায়েত হওয়ার খবর দিয়েছেন স্থানীয় গণমাধ্যম।

অন্যদিকে, প্রেসিডেন্টের সমর্থকরাও অনেকে ওই এলাকায় জমায়েত হয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওলকে গত ১৪ ডিসেম্বর ইমপিচ বা অভিশংসন করে দেশটির পার্লামেন্ট।

সিআইওতে উপস্থিত ইউন
স্থানীয় গণমাধ্যমের সবশেষ খবর অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী গাড়িবহর তার বাসভবন ত্যাগের কয়েক মিনিটের মধ্যেই সিআইওতে উপস্থিত হয়।

তদন্তকারীরা নিশ্চিত করেছেন, তারা ইউনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করেছেন।

প্রেসিডেন্টের আইনজীবী সিওক ডং-হুয়ান ফেসবুকে দেয়া পোস্টে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাসা ত্যাগ করতে রাজি হয়েছেন এবং মারাত্মক দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছেন।’

তিনিও প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রমকে ‘অবৈধ’ আখ্যায়িত করেন।

বিরোধী নেতার বক্তব্য
ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা পার্ক চান-দায়ে বলছেন, প্রেসিডেন্ট ইউনের গ্রেফতার নিশ্চিত করেছে যে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিচার ব্যবস্থা এখনো বেঁচে আছে।

দলীয় এক সভায় তিনি বলেন, ‘এই গ্রেফতার সাংবিধানিক অর্ডার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ।’

প্রেসিডেন্ট ইউন সামরিক শাসন জারির চেষ্টার পর থেকেই বিরোধী দল তার অভিশংসন ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে আসছে।

এর মধ্যে তারা প্রেসিডেন্ট ইউন ও ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সুসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের অভিশংসনে সফল হয়েছে।

‘সঙ্কটের শেষ নয় এটি’
বিবিসির শায়মা খলিল প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে তার পক্ষে ও বিপক্ষে থাকা দুই জমায়েতের মাঝে অবস্থান করছিলেন।

তিনি জানিয়েছেন, ইউনবিরোধী শিবির প্রেসিডেন্টের গ্রেফতারকে উদযাপন করছে। তারা উল্লাস করে অভিনন্দন জানাচ্ছিল।

অন্যপক্ষের জমায়েতের পরিবেশ ছিল পুরোপুরি ভিন্ন।

প্রেসিডেন্টের একজন সমর্থক বলছিলেন, ‘আমরা খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ- আইন শৃঙ্খলা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।’

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতির জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। দেশটির ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টকে আটক করা হলো।

তবে এতে করে সংকটের সমাধান হচ্ছে না বরং রাজনৈতিক নাটকীয়তার ক্ষেত্রে এটি আরেকটি অধ্যায় মাত্র, লিখেছেন শায়মা খলিল।

এর আগে চলতি মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইউলকে দেশটির তদন্তকারীরা গ্রেফতারের চেষ্টা চালালে সওলে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়।

ওই ঘটনার আগে দেশটির আদালত ইউনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিল।

ইউনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিলো, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং বিদ্রোহ উসকে দিয়েছেন।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইউনের বিরুদ্ধে সমন জারি করা হলেও তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের সামনে হাজির হতে বারবার অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যে কারণে তখন এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

ইউন সুক ইউল সম্পর্কে যা জানা প্রয়োজন
রাজনীতিতে নতুন আগত নেতা ইউন সুক-ইউল ২০২২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অল্প ব্যবধানে জয়ী হন।

কিন্তু দ্রুতই তিনি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন, যার বেশিভাগ ছিল তার স্ত্রী কিম কিওন হি-কে নিয়ে।

ইউনের স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি এক পাদ্রির কাছ থেকে ডিওর ব্র্যান্ডের লাক্সারি হ্যান্ডব্যাগ গ্রহণ করেছেন।

গত এপ্রিলের পার্লামেন্টারি নির্বাচনে বিরোধী দল ভূমিধস জয় পাওয়ার পর, ইউন কার্যত লেম ডাক কিংবা দুর্বল প্রেসিডেন্টে পরিণত হন, যার ক্ষমতা বলতে ছিল কেবল বিল ভেটো দেয়া।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ইউন মার্শাল ল’র ঘোষণা দেন। কিন্তু ওই সিদ্ধান্ত একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে আজকের গ্রেফতার পর্যন্ত এসেছে।

ডিসেম্বর মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট সামরিক আইন জারি করলে এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পার্লামেন্ট এর বিরুদ্ধে ভোট দেয়। ফলে সামরিক আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হন প্রেসিডেন্ট।

ভোটে পরাজিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর তিনি পার্লামেন্টের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং সামরিক আইন জারির আদেশ প্রত্যাহার করেন।

এশিয়ার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত এই দেশটিতে গত ৫০ বছরের মধ্যে এই প্রথম মার্শাল ল’ বা সামরিক আইন জারির ঘটনা ঘটলে তাতে হতবাক হয় দেশটির মানুষ।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বশেষ সামরিক শাসন জারি হয়েছিল ১৯৭৯ সালে। ওই সময় দেশটির দীর্ঘসময়কার সামরিক স্বৈরশাসক পার্ক চুং হি অভ্যুত্থানে নিহত হয়েছিলেন।

পরে ১৯৮৭ সালে দেশটি সংসদীয় গণতন্ত্র চালু করার পর এ ধরনের ঘটনা আর ঘটেনি।
সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
যুদ্ধবিরতির তুমুল আলোচনার মধ্যেই ৬২ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ‘পাইকগাছা কৃষি কলেজ এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস’ নির্বাচনের আগেই গণহত্যার বিচার : আসিফ নজরুল চকরিয়ায় ডাম্পারচাপায় শ্রমিক নিহত এনসিটিবি ভবন ঘেরাও কর্মসূচিতে হামলা সংস্কার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা কে হবে মিয়ানমারের আগামীর নীতিনির্ধারক ফ্যাসিবাদীরা বিদেশে অর্থ পাচার করে অর্থনীতি ধ্বংস করেছে : সেলিমা রহমান নোবিপ্রবির সাথে চীনের শিহেজী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর মতিউরের স্ত্রী কানিজ কারাগারে, রিমান্ড শুনানি ১৯ জানুয়ারি মহেশখালীতে প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বে যুবক খুন

সকল