২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

কেন নামমাত্র দামে আমেরিকার কাছে আলাস্কা বিক্রি করেছিল রাশিয়া?

- ছবি - সংগৃহীত

প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্য আলাস্কা। এই অঙ্গরাজ্যকে আমেরিকা বর্তমানে অর্থনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। অথচ প্রায় দেড় শ’ বছর আগেও এ জায়গাটি ছিল রাশিয়ার। তখন মাত্র ৭২ লাখ ডলারে আমেরিকার কাছে আলাস্কা বিক্রি করে দেয় রাশিয়া, বাংলাদেশী টাকায় সাড়ে ছয় কোটিরও কম। এই অর্থ দিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে পাঁচ লাখ ৮৬ হাজার বর্গ মাইলের আলাস্কা আমেরিকার হাতে আসে। যেটি আমেরিকার টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের দ্বিগুণ। বাংলাদেশের চার গুণেরও বেশি।

কিন্তু আমেরিকা যখন রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা ক্রয় করে তখন আমেরিকার ভেতরেই অনেক এ পদক্ষেপকে 'বোকামি' হিসেবে বর্ণনা করেছিল। কারণ, তখন আলাস্কা ছিল পাহাড়-পর্বত এবং সমুদ্রে ঘেরা এক জায়গা। জনবসতিও তেমন একটা ছিল না। অন্যদিকে আবহাওয়া ছিল বেশ চরমভাবাপন্ন। অথচ সেই আলাস্কা এখন প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার।

রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা ক্রয় করার পর সেখানে তেল এবং স্বর্ণসহ নানাবিধ খনিজ সম্পদ আবিষ্কার করে আমেরিকা।

রাশিয়া কেন আলাস্কা বিক্রি করেছিল?
১৭২৫ সালে রাশিয়ার জার পিটার দ্য গ্রেট আলাস্কা উপকূলে সম্ভাবনা দেখার জন্য রাশিয়ার নৌ-বাহিনীর এক কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেন। তখন আলাস্কা নিয়ে রাশিয়ার বেশ আগ্রহ ছিল। এর কারণ হচ্ছে, আলাস্কায় প্রাকৃতিক সম্পদ ছিল। কিন্তু সেখানে মানুষের তেমন একটা বসবাস ছিল না।

অন্যদিকে ১৮০০ সালের শুরুর দিকে আমেরিকা আরো পশ্চিম দিকে সম্প্রসারিত হতে থাকে। ফলে রাশিয়ার ব্যবসায়ী এবং অভিযাত্রীদের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিন্তু উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে কোনো স্থাপনা করা কিংবা সামরিক উপস্থিতি করার মতো আর্থিক সামর্থ্য রাশিয়ার ছিল না। তাছাড়া আলাস্কায় রাশিয়ার অধিবাসী তখনো পর্যন্ত চার শ’ জনের বেশি ছিল না। এবং তা পরবর্তীতেও বাড়েনি।

১৮৫৩ সাল থেকে ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত ক্রাইমিয়া যুদ্ধে রাশিয়া পরাজিত হয়। ক্রাইমিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল ফ্রান্স, অটোমান এবং গ্রেট ব্রিটেন। ক্রাইমিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার পরাজয়ের কারণে আলাস্কা নিয়ে তাদের আগ্রহ কমতে থাকে।

ব্রিটেনকে নিয়ে রাশিয়ার মনে এক ধরণের ভয় ছিল। তাদের ধারণা ছিল, ব্রিটেনের সাথে যুদ্ধ করে আলাস্কা হারানোর চেয়ে আমেরিকা কাছে বিক্রি করে দেয়াই ভালো। তাছাড়া রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে আলাস্কা ছিল অনেক দূরে।

আঠারোশ শতকে রাশিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে বৈরিতা ছিল না। তারা উভয়ে ব্রিটেনকে অপছন্দ করতো।

যেভাবে বিক্রি হয়েছিল
১৮৫৯ সালে আমেরিকার কাছে আলাস্কা বিক্রির প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। সে সময় প্রশান্ত মহাসাগরে রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে বৈরি দেশ ছিল গ্রেট ব্রিটেন।

আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের অফিস অব দ্য হিস্টোরিয়ান-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, আমেরিকার কাছে আলাস্কা ছেড়ে দিলে তারা প্রশান্ত মহাসাগরে গ্রেট ব্রিটেনের কর্তৃত্ব খর্ব করতে পারবে।

এ ধারণা থেকে রাশিয়া আমেরিকার কাছে আলাস্কা বিক্রির প্রস্তাব দেয়। কিন্তু আমেরিকায় তখন গৃহযুদ্ধ চলছে। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে আমেরিকার তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম সিওয়ার্ড দ্রুততার সাথে রাশিয়ার প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

১৮৬৭ সালের ৩০ মার্চ ৭২ লাখ ডলারে আলাস্কা বিক্রির প্রস্তাবে রাজি হয় আমেরিকা। ওই বছর এপ্রিল মাসে সেনেট এই চুক্তি অনুমোদন করে এবং মে মাসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন সে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

১৮ অক্টোবর আমেরিকার কাছে আলাস্কা আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে রাশিয়া। এর ফলে উত্তর আমেরিকায় রাশিয়া অস্তিত্ব শেষ হয় এবং একইসাথে প্রশান্ত মহাসাগরে সর্ব উত্তরে আমেরিকার প্রবেশপথ তৈরি হয়।

আমেরিকার তেমন মনোযোগ ছিল না
আলাস্কা ক্রয় করার পর সেখানে প্রথম দিকে আমেরিকা তেমন কোনো মনোযোগ দেয়নি। তখন আলাস্কা শাসন করতো সেনা, নৌ কিংবা ট্রেজারি বিভাগ। মাঝে মধ্যে সেখানে কোনো শাসন দৃশ্যমান হতো না। ১৮৮৪ সালে আমেরিকা আলাস্কায় একটি বেসামরিক সরকার গঠন করে।

রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা ক্রয় করার বিষয়টিকে আমেরিকার ভেতরেই অনেকে 'সিওয়ার্ডের বোকামি' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। কারণ তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম সিওয়ার্ড রাশিয়ার কাছ থকে আলাস্কা ক্রয় করার জন্য বেশি উৎসাহী ছিলেন। কিন্তু ১৮৯৬ সালে আলাস্কায় যখন স্বর্ণের খনি আবিষ্কৃত হয় তখন সবাই নড়েচড়ে বসে। তখন অনেকে বুঝতে শুরু করে যে সিওয়ার্ড কোনো বোকামি করেননি। এছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আলাস্কার কৌশলগত গুরুত্বও বোঝা গিয়েছিল।

আমেরিকার লাভ
১৯৫৯ সালের ৩ জানুয়ারি আলাস্কা আমেরিকার ৪৯তম অঙ্গরাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায়। বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদের জন্য আলাস্কা বর্তমানে পরিচিত একটি নাম।

ইউএস এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের শুরুতে আলাস্কায় জ্বালানী তেলের রিজার্ভ প্রায় আড়াই বিলিয়ন ব্যারেল, যেটি ছিল আমেরিকার মধ্যে চতুর্থ। বহু বছর ধরে আলাস্কা ছিল আমেরিকার প্রথম পাঁচটি তেল উৎপাদনকারী অঙ্গরাজ্যের মধ্যে অন্যতম। কিন্তু ২০২০ সালে সেটি ছয় নম্বরে নেমে এসেছে। এখন প্রায় দৈনিক সাড়ে চার লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হয় আলাস্কায়। অথচ ১৯৮৮ সালে সেখানে দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন হতো।

আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের একটি বিশাল এলাকায় এখনো তেল গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি। জিঙ্ক উৎপাদনের দিক থেকে আমেরিকার ভেতরে আলাস্কা সবার উপরে আছে। এছাড়া আমেরিকার অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ উৎপাদনকারী অঙ্গরাজ্য হচ্ছে আলাস্কা।

এছাড়া আমেরিকার ৫০ শতাংশ সামুদ্রিক খাদ্য আসে আলাস্কা থকে।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
২৩ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার বান্দরবানের গহীন জঙ্গলে কেএনএ’র গোপন আস্তানার সন্ধান হত্যা মামলায় গ্রেফতার হয়ে ডিসি মশিউর ও এডিসি জুয়েল বরখাস্ত গাজীপুরে আরো এক মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান রাজশাহীর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে আইসিইউ ইউনিট উদ্বোধন ডেঙ্গুতে এক দিনে বছরের সর্বোচ্চ মৃত্যু, হাসপাতালে ১০৭৯ পার্থ টেস্টে জয়ের সুবাস পাচ্ছে ভারত ব্যবসায়ী জালাল উদ্দীন হত্যা : শেখ হাসিনাসহ ১২৯ জনের নামে মামলা ডিসেম্বর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে ঢাকা-নড়াইল-খুলনা রুটে নারায়ণগঞ্জে ১৬ কোটি টাকার ভারতীয় কাপড় উদ্ধার গলাচিপায় জালে ধরা পড়ল ২০০ বছরের জলপাইরঙ্গা কাছিম

সকল