২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

যে নেতার মৃত্যুতে আলোচনা তৈরি হয়েছে আমেরিকায়

যে নেতার মৃত্যুতে আলোচনা তৈরি হয়েছে আমেরিকায় - সংগৃহিত

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের অন্যতম আইকন এবং কংগ্রেসের সদস্য জন লুইস ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। ১৯৬৩ সালে ওয়াশিংটনে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে 'আই হ্যাভ এ ড্রিম' শিরোনামের যে বিখ্যাত ভাষণ দিয়েছিলের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং, ঐ সমাবেশের আয়োজকদের মধ্যে একজন ছিলেন জন লুইস।

জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট নেতা ছিলেন জন লুইস। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি জানিয়েছিলেন যে চতুর্থ ধাপের অগ্নাশয়ের ক্যান্সারের ভুগছেন তিনি।

১৯৬৩ সালের ২৩শে অগাস্ট যেই সমাবেশে মার্টিন লুথার কিং তার ঐতিহাসিক 'আই হ্যাভ এ ড্রিম' ভাষণ দেন, ঐ সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দশ জন, তার মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ছিলেন জন লুইস- মার্টিন লুথার কিং'এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সেদিন সাদা-কালো সকল ধর্মবর্ণের আমেরিকানই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংশ থেকে এসে ওয়াশিংটনে সমবেত হয়েছিল, তাদের দাবি ছিল বর্ণবৈষম্যের অবসান। জন লুইসের বয়েস তখন মাত্র ২৩। তিনিও ছিলেন ওই সমাবেশের একজন বক্তা। ঐ সমাবেশের বক্তাদের মধ্যে শুথুমাত্র জন লুইস'ই বেঁচে ছিলেন।

১৯৪০ সালে আলাবামার ট্রয় শহরে জন্ম হয় তার। আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে কৃষ্ণাঙ্গ শিশু হিসেবে বেড়ে ওঠার সময়ই তীব্র বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হয় তাকে। সেসময় আলাবামা রাজ্যে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের একসাথে পড়ালেখা করার বিষয়ে বিধিনিষেধ ছিল। জন লুইস ট্রয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করতে চাইলেও সেটিতে শুধু শ্বেতাঙ্গদেরই পড়ার অধিকার ছিল। এর কারণে ১৭ বছর বয়সে আলাবামা রাজ্য ত্যাগ করেন তিনি, যোগ দেন টেনেসির আফ্রিকান-আমেরিকান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

এরই মধ্যে নিজ শহর ট্রয়ে ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সেখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদনপত্র পাঠান। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার আবেদনপত্রের বিপরীতে কোনো জবাবই দেয়নি। ট্রয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় জন লুইসের চিঠির উত্তর না দেয়ায় তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। তার হতাশার কথা জানিয়ে মার্টিন লুথার কিংকে চিঠি লিখেন জন লুইস। জবাবে কিং জন লুইসকে মন্টেগোমেরির টিকিট পাঠান, যেন তিনি সেখানে গিয়ে কিংয়ের সাথে দেখা করতে পারেন।

মার্টিন লুথার কিংয়ের সাথে জন লুইসের ঐ সাক্ষাৎই ছিল তাদের প্রথম সাক্ষাৎ এবং পরবর্তীতে জন লুইসের নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা হওয়ার পথে প্রথম ধাপ। ছাত্রজীবনের প্রায় পুরোটা সময়েই আফ্রিকান-আমেরিকানদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন জন লুইস। ১৯৬১ সালে গণপরিবহণে কৃষ্ণাঙ্গদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে যেই ১৩ জন 'ফ্রিডম রাইডার' যাত্রা শুরু করেন, জন লুইস ছিলেন তাদের একজন।

সেসময় আমেরিকার কোনো গণপরিবহণে বা পাবলিক প্লেসে শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তি পাশাপাশি দাঁড়ানো আইনত দণ্ডনীয় ছিল। এই নিয়মের প্রতিবাদ করতে ১৩ জন প্রতিবাদকারী- যাদের ৭ জন শ্বেতাঙ্গ ও ৬ জন কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন - ওয়াশিংটন থেকে নিউ অরলিন্স পর্যন্ত বাসে ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন।

শুরুর দিকে ভার্জিনিয়া বা নর্থ ক্যারোলাইনা অঞ্চলে ঝামেলা না পোহালেও সাউথ ক্যারোলাইনার রক হিলের একটি বাস স্টেশনে শ্বেতাঙ্গ গুণ্ডাদের আক্রমণের শিকার হন তারা। তাদের অপরাধ ছিল শুধু শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত একটি ওয়েটিং রুমে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন তারা। সেদিন লুইসকে মেরে রক্তাক্ত করা হয়। সেদিন তার ওপর আক্রমণ করা এলউইন উইলসন ২০০৯ সালে এক অনুষ্ঠানে সবার সামনে লু্ইসের কাছে ক্ষমা চান এবং নিজের ভুল স্বীকার করেন। ১৯৬৩ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে লিংকন মেমোরিয়ালে আড়াই লাখ মানুষের সামনে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়েছিলেন জন লুইস।

ঐ বক্তব্যে তিনি বলেছিলেন, পুলিশের মার খেতে খেতে আমরা ক্লান্ত। আমাদের লোকেরা কারাগারে যেতে যেতে ক্লান্ত। আর জবাবে বলা হয় 'ধৈর্য্য' ধরতে। আর কতদিন ধৈর্য্য ধরে থাকবো। আমরা আমাদের স্বাধীনতা চাই এবং এখনই চাই। আই হ্যাভ এ ড্রিম' নামে খ্যাত হওয়া মার্টিন লুথার কিং-এর ওই ভাষণ সারা আমেরিকা জুড়ে টেলিভিশনে প্রচার হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবেই সেটি স্বীকৃতি পেয়েছিল এক ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে। আমেরিকার সিভিল রাইটস আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটা ছিল উচ্চতম মুহুর্তগুলোর একটি। ড. কিং-এর স্বপ্নের আমেরিকার সেই রূপকল্প সেদেশেই শুধু নয় - তার বাইরেও মানুষের মনে দাগ কেটেছিল।

২০১৩ সালে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জন লুইস বলেছিলেন, আজকের আমেরিকায় মার্টিন লুথার কিং'এর বিখ্যাত উক্তিগুলোর অনুরণন এখনো হচ্ছে। গত কয়েকবছর যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আইন, নীতিমালা ও বিবৃতির কঠোর সমালোচনা করেছেন জন লুইস। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানও বয়কট করেছিলেন তিনি। নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়া স্বত্ত্বেও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারের সমালোচনা করতে পেছপা হননি তিনি।

জন লুইস বলতেন,‘তুমি যখন দেখবে যে কিছু একটা অন্যায়, অবিচার হচ্ছে, তখন তার বিরুদ্ধে কথা বল। তোমার তখন এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে হবে, কিছু করতে হবে। লড়াইয়ে বুঝে শুনে নেমো, কিন্তু যখন সময় আসবে তখন অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ও লই করতে পিছপা হবে না। সূত্র: বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
আ.লীগ প্রশ্নে 'জিরো টলারেন্স'সহ ৪ সিদ্ধান্ত সব ছাত্র সংগঠনের ঋণের ধোঁকা দিয়ে সারা দেশ থেকে ঢাকায় লোক জমায়েতের চেষ্টা ঘোষণা দিয়ে মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন সংশোধনে নতুন বিধান বাংলাদেশ শ্রম আইন ব্যাপক সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বড় পরিকল্পনা না থাকলে একদিনে এত ঘটনা ঘটত না : তথ্য উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপির কোনো মতপার্থক্য নেই পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় স্থাপনে দ্বৈত শাসনের অবসান হবে ফলোঅন স্বস্তির পর বাংলাদেশের ইনিংস ঘোষণা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের ইসকন নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার

সকল