বিক্ষোভের মাঝে মাদুরোর তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬:৫০
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো শুক্রবার তৃতীয় মেয়াদে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এই শপথ গ্রহণের আগের দিন দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক প্রতিবাদ দেখা গেছে।
কারাকাস থেকে এএফপি জানায়, বিরোধী নেতা মারিয়া করিনা মাচাদো বৃহস্পতিবার কারাকাসে এক বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিতে আত্মগোপন থেকে বের হন। বিক্ষোভ শেষে তাকে সাময়িকভাবে আটক করা হয় বলে তার দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এই ঘটনা আবারো মাদুরোর নির্বাচনী কারচুপি এবং সমালোচকদের দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দার ঝড় তোলে।
সরকার মাচাদোকে গ্রেফতারের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার মাচাদো ও এডমুন্ডো গনজালেস উরুতিয়াকে ‘স্বাধীনতা যোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মাচাদো গত ২৮ জুলাইয়ের নির্বাচনে মাদুরোর বিরুদ্ধে জয়ী বলে ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে লিখেছেন, ‘তাদের ক্ষতি করা যাবে না এবং অবশ্যই নিরাপদ ও জীবিত রাখতে হবে।’
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে মাদুরো সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। পরে তার উত্তরসূরি জো বাইডেন এই নিষেধাজ্ঞা আংশিকভাবে শিথিল করলেও তা আবার পুনর্বহাল করা হয়। ট্রাম্পের পরবর্তী মেয়াদে এই নিষেধাজ্ঞা আরো কঠোর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মাদুরোর ঐতিহাসিক মিত্র কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো মাচাদোর ‘পদ্ধতিগত হয়রানি’র নিন্দা করেছেন। ইকুয়েডর মাদুরোর শাসনকে ‘একনায়কতন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছে, আর স্পেন মাচাদোর সংক্ষিপ্ত আটককে ‘সম্পূর্ণ নিন্দা’ জানিয়েছে।
মাচাদোর দল এক্সে (সাবেক টুইটার) জানায়, বিক্ষোভ শেষে মাচাদোকে ‘সহিংসভাবে আটকানো’ হয় এবং তার মোটরসাইকেল বহরের আশপাশে গুলির ঘটনা ঘটে। পরে তাকে আটক করে একাধিক ভিডিও ধারণে বাধ্য করা হয় এবং তারপরে ছেড়ে দেয়া হয়।
মাচাদো তার বক্তব্যে হাজার হাজার সমর্থকের সামনে বলেন, ‘আমরা ভীত নই।’
ফ্রান্সের প্যারিসেও একটি বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মাচাদোর মেয়ে আনা করিনা সোসা ও তার সমর্থকরা অংশ নেন।
মাদুরোর শপথ গ্রহণের আগে বিরোধীদের বিরুদ্ধে নতুন করে দমন-পীড়নের কথা জানানো হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আরেক বিরোধী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, একটি সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এনজিও প্রধান এবং গনজালেস উরুতিয়ার জামাতার গ্রেফতার।
জাতিসঙ্ঘ এ সপ্তাহে আটক ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে।
গত বছর মাদুরোর নির্বাচনী জয়ের দাবি ঘিরে হওয়া বিক্ষোভে ২ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার, ২৮ জন নিহত এবং প্রায় ২০০ জন আহত হন।
ক্ষমতা ধরে রাখতে তিনি সামরিক, পুলিশ ও সশস্ত্র বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকদের (প্যারামিলিটারি ‘কো অলেক্তিভোস’) মাধ্যমে শাসন চালিয়ে যাচ্ছেন।
৭৫ বছর বয়সী সাবেক কূটনীতিক গনজালেস উরুতিয়া কারাকাসে এসে ক্ষমতা গ্রহণের পরিকল্পনা করেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তার বিরুদ্ধে এক লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণাসহ সারা কারাকাসে ‘ওয়ান্টেড’ পোস্টার লাগানো হয়েছে।
গনজালেস উরুতিয়া আন্তর্জাতিক সফরে গিয়ে মাদুরোর ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎও অন্তর্ভুক্ত, যেখানে বাইডেন ‘গণতান্ত্রিক শাসনে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবর্তন’-এর আহ্বান জানিয়েছেন।
২০১৩ সালে বামপন্থী নেতা হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর মাদুরো ক্ষমতায় আসেন। ২০১৮ সালের পুনর্নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে জালিয়াতি হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হলেও তিনি পপুলিজম এবং দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।
বৃহস্পতিবার মাদুরোর সমর্থক হাজার হাজার লোক কারাকাসে পাল্টা সমাবেশ করে তার তৃতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণে যেকোনো বাধা প্রতিরোধের অঙ্গীকার করে।
সূত্র : বাসস