কমলাপুর ঘিরে তিন সরকারি সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প
- আমার ঢাকা প্রতিবেদক
- ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ০০:০০
নির্মাণাধীন উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেলটি কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত বাড়াতে চায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। অন্য দিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল ফ্লাইওভারের নকশা করা হচ্ছে কমলাপুর স্টেশনকে ঘিরে। এ ছাড়াও কমলাপুর স্টেশনকে মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় রেলওয়ে। জাপান-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে ট্রান্সপোর্ট হাবটি নির্মাণে রেলওয়েকে প্রস্তাব দিয়েছে জাপানের কাজিমা করপোরেশন।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের যে পরিকল্পনা, তাতে লাইন-১ ও লাইন-৪-এর স্টেশন কমলাপুরে রাখা হয়েছে। এখন আবার নতুন করে উত্তরা-মতিঝিল লাইনটি কমলাপুর পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটিকে সমন্বিতভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ট্রেনের পাশাপাশি স্টেশন ব্যবহারকারী যাত্রীরা যেন অন্য যানবাহন ও যোগাযোগ অবকাঠামো ব্যবহার করতে পারে, সে লক্ষ্যেই আধুনিকায়ন পরিকল্পনা করছে সংস্থাটি। পাশাপাশি স্টেশন এলাকায় যেসব জায়গা অব্যবহৃত থাকবে, সেখানে বাণিজ্যিক কার্যক্রমের মাধ্যমে রাজস্ব আয়ের বিকল্প মাধ্যমও গড়ে তুলতে চায় রেলওয়ে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে যেসব সংস্থা সম্পর্কিত, সেগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের কথা বারবার বলছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। একই কথা বলছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরাও। তবে এ মুহূর্তে সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের আধুনিকায়ন পরিকল্পনা পুরোপুরি ভেস্তে যাওয়ার শঙ্কাও করছেন তারা।
কমলাপুরে মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের বিষয়গুলো দেখভাল করছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মনিরুল ইসলাম ফিরোজী। তিনি বলেন, মাল্টি-মোডাল ট্রান্সপোর্ট হাবের বিষয়টি পরিবহন সম্পর্কিত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়নির্ভর। কমলাপুরকে ঘিরে বিভিন্ন সংস্থা একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে রেখেছে। এখানে মেট্রোরেল আসবে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আসবে, ঝিলমিল ফ্লাইওভারও আসবে। একইভাবে সেতু বিভাগ যে সাবওয়ের পরিকল্পনা করছে, তার গতিপথেও কমলাপুর থাকছে। ট্রান্সপোর্ট হাবের সফল বাস্তবায়ন করতে হলে এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। আমরা সেই কাজটিই করে যাচ্ছি। তবে কোনো সংস্থা যদি এ সমন্বয় কার্যক্রমে না এসে নিজেদের মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, তা হলে ট্রান্সপোর্ট হাব বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়বে।
রেলওয়ের আপত্তি সত্ত্বেও ‘নিজেদের মতো করে’ প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে উত্তরা-মতিঝিল মেট্রোরেল প্রকল্পটি কমলাপুর পর্যন্ত বর্ধিত করতে ‘টপোগ্রাফি সার্ভে’ সম্পন্ন করেছে ডিএমটিসিএল। বর্তমানে চলছে ‘সোস্যাল সার্ভে’র কাজ।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কিছু আইকনিক স্থাপনা আছে। কমলাপুর স্টেশন তেমনই একটি স্থাপনা। এ স্টেশনটির কোনো ক্ষতি না করেই আমরা সেখানে মেট্রোরেলের স্টেশন বানাব।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুল পরিকল্পনা আর সমন্বয়হীনতার মাধ্যমে ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নের অনেক সুযোগ নষ্ট করা হয়েছে। কমলাপুরকে ঘিরে বিভিন্ন সংস্থা যেভাবে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, তাতে স্টেশনকেন্দ্রিক অবকাঠামোর উন্নয়নের যে সুযোগটা রয়েছে, তা-ও নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক জানিয়েছেন, ঢাকার যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে অতীতে অনেক ভুল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এটা হয়েছে প্রকল্পকেন্দ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য। যে সম্ভাবনাগুলো ছিল, সেগুলোর বেশির ভাগই আমরা নষ্ট করেছি। এখন এক কমলাপুর ঘিরেই তিনটি সংস্থা উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে সমন্বয় না হলে কমলাপুরকেন্দ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নের যে সুযোগ রয়েছে, তা নষ্ট হবে। বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের জন্য দেশে কোনো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান নেই। সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে পরিবহন ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য ডিটিসিএ গঠন করলেও সংস্থাটিকে সেভাবে ক্ষমতা দেয়া হয়নি।