শাহজালালে লেজার লাইটের উৎপাত উৎকণ্ঠায় পাইলটরা
- আহমেদ ইফতেখার
- ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লেজার লাইটের কারণে সন্ধ্যার পর বিমান ওঠানামার সময় সমস্যায় পড়ছেন পাইলটরা। লেজার রশ্মি কারণে তারা চোখে ঝাপসা দেখেন। এ ছাড়া যেকোনো সময় দুর্ঘটনার শঙ্কাও রয়েছে। এ বিষয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে তিন মাস আগে অভিযোগ করেন পাইলটরা। তার পরও বন্ধ হয়নি লেজারের উৎপাত। বিমানবন্দরের বাইরে থেকে এ ঘটনা ঘটায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না বেসামরিক বিমান চলাচল (বেবিচক) কর্তৃপক্ষ।
লেজার লাইটের ঝুঁঁকি প্রসঙ্গে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবেক পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব:) জাকির হাসান বলেন, ‘মজা করতে লেজারের আলো বিমানের দিকে ছোড়া হয়। কিন্তু এ থেকে যেকোনো সময় বিপদ ঘটতে পারে। যদি লেজারের আলো পাইলটের চোখে পড়ে, তাহলে তিনি বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন। বিমান অবতরণের সময়টা পাইলটের জন্য সব চেয়ে ক্রিটিক্যাল। ওই সময়ে যদি পাইলট যদি চোখে আলো পড়া থেকে বাঁচতে সামনের দিক থেকে চোখ সরান, তাহলে যেকোনো ভুল করে ফেলতে পারেন। আর এ জন্য যদি বিমান দুর্ঘটনায় পড়ে তাহলে শুধু বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়। কতগুলো মানুষের জীবন চলে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বিমানকে টার্গেট করে লেজারের আলো নিক্ষেপ শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ, এ মর্মে গত ১৭ জুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেবিচক। একই সাথে বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানায় সংস্থাটি। বেবিচক জানায়, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭-এর ধারা-২৬ অনুসারে এ ধরনের কর্মকাণ্ড আইনত শাস্তিযোগ্য ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
কয়েকটি এয়ারলাইন্সের পাইলট জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত রাতের বেলায় বিমান ওঠানামার সময় ককপিটের দিকে লেজার লাইটের আলো ছোড়া হচ্ছে। বিমানবন্দরের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকার বাসা, ছাদ থেকে ককপিটে আলো ফেলা হচ্ছে। তীব্র আলো পাইলটদের দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। লেজারের উৎপাতের বিষয়ে বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়াকেও জানিয়েছেন পাইলটরা। তারপরও এখন পর্যন্ত কোনো কাজ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পাইলট বলেন, বাংলাদেশে অবতরণ ঝুঁঁকিপূর্ণ এই কারণ দেখিয়ে কোনো বিদেশী এয়ারলাইন্স যদি দেশে না আসে, কোনো দেশ যদি বাংলাদেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে দেশের জন্য নেতিবাচক হবে। ফলে বিমানবন্দরের বাইরে থেকে হচ্ছে, এই কারণ দেখিয়ে বেবিচকের বসে থাকার সুযোগ নেই। তাদের পক্ষে হয়তো নজরদারি করা সম্ভব নয়। কিন্তু ব্যাপক প্রচার চালানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার জন্য বেবিচকের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
প্রতিকার প্রসঙ্গে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবেক পরিচালক বলেন, মানুষকে জানাতে হবে, লেজার লাইটের আলো বিমান চলাচলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে। রাতের বেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টহল দিয়ে নজর রাখলে যারা এসব করছে, তারা হয়তো এসব করা থেকে বিরত থাকবে। তবে সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে সচিব মহিবুল হক বলেন, আমরা সরকারি একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছি, তারা তদন্ত করে দেখছে। যে কেউ বাড়িতে বসে লেজার মেরে সরে যেতে পারে। এগুলো শনাক্ত করা খুবই কঠিন, তবে একবারে অসম্ভব নয়। শনাক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।