কর্মস্থলে বাড়ছে ডেঙ্গু ঝুঁঁকি
- ০৬ আগস্ট ২০১৯, ০০:০০
রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের আট চিকিৎসক ও ২৭ জন নার্সও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। এ ছাড়া রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এক চিকিৎসক এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ছয় চিকিৎসক এবং তিনজন নার্স আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন চিকিৎসক ও এক নার্সের মৃত্যু হয়েছে। শুধু চিকিৎসক-নার্সই নন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরা সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পর্যালোচনায়ও চাকরিজীবীদের ঝুঁকিতে থাকার তথ্য উঠে এসেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত দুই হাজার ৮৮৬ রোগীর মধ্যে পেশাভিত্তিক পর্যালোচনা করে সংস্থাটি বলছে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিরা সবচেয়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
আইইডিসিআরের পর্যালোচনায় দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী ৮৬৪ জন, ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৬০৭ জন, ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ২৭৪ জন, ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সী ১৩১ জন এবং ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ৬১ জন রয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী মানুষের সংখ্যা এক হাজার ৯৩৭ জন। এ হিসাবে চাকরিজীবীরা ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ আক্রান্ত হয়েছেন।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থী আছেন। তবে এসব শিক্ষার্থীর একটি বড় অংশ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ফুলটাইম কিংবা পার্টটাইম চাকরি করেন। এ ছাড়া ২৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা চাকরি ও ব্যবসায় করেন। সুতরাং এই পর্যালোচনা থেকে বলা যায়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা ব্যক্তিরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন।
রাজধানীর মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা: সুদীপ রঞ্জন দেব ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। গত বৃহস্পতিবার জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। জ্বর নিয়েও ওই দিন তিনি হাসপাতালের রোগীর সেবা নিশ্চিত করেন। পরদিন শুক্রবার থেকে তার শরীরের পরিস্থিতি গুরুতর হতে শুরু করে। শনিবার রক্ত পরীক্ষার পর জানতে পারেন, তিনিও ডেঙ্গু আক্রান্ত। এর পর থেকে বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। ডা: সুদীপ রঞ্জন দেব জানান, তার বিভাগের আরো তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন নারী চিকিৎসকের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। ওই চিকিৎসক মুগদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার রক্তের প্লাটিলেট কমে যাচ্ছে। কয়েকবার রক্তের প্লাটিলেট দেয়া হয়েছে। এর পরও তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
মশা থেকে সুরক্ষার জন্য পরামর্শ দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, কর্মস্থলকে সুরক্ষার আওতায় আনতে হবে। এ জন্য জুতা-মোজা ও ফুলহাতা শার্ট ব্যবহার করতে হবে। একই সাথে মশা প্রতিরোধী অ্যারোসলসহ অন্যান্য সামগ্রী অবস্থানরত কক্ষে ব্যবহার, কক্ষের পরিবেশ সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কক্ষের আশপাশের ফুলের টব সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। দিন-রাতের যেকোনো সময় ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে।
আইসিডিডিআরবির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: মাহমুদুর রহমান বলেন, অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এডিস মশার বিস্তার দেখা যাচ্ছে। যেসব হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন, সেসব হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স ও অন্যান্য রোগীও অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছেন। কারণ ডেঙ্গুবাহিত রোগীকে কোনো মশা কামড় দিলে সেই মশা ওই ভাইরাস বহন করবে। ওই মশা অন্যজনকে কামড় দিলে সেই ব্যক্তিও ডেঙ্গু আক্রান্ত হবেন। হ