২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

শৃঙ্খলা আসছে না ঢাকার রাজপথে

-

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজধানীতে গত ১৫৮ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ১৫ দিনের ‘ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ-২০১৯’, চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। অবাক করার বিষয় হলোÑ ঢাকায় শুধু মানুষের যত্রতত্র পারাপারই নয়, যেখানে-সেখানে থামছে বাসগুলো। ইচ্ছামতো সড়কের ওপরই যাত্রী তোলা হচ্ছে। মানুষও দৌড় দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা করছে। এসব ঘটছে ট্রাফিক পুলিশের সামনেই। ট্রাফিক পুলিশও নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে জানালেন, মানুষ সচেতন না হলে শুধু আইন দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে না। ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত যানবাহনের সামনে দিয়ে যখন-তখন রাস্তা পার হচ্ছে পথচারীরা।
শাহবাগ থেকে ধেয়ে আসছিল বেশ কয়েকটি বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি। এরই মধ্যে কয়েকজন পথচারী দৌড়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছিলেন। এ যাত্রায় কোনো দুর্ঘটনা না ঘটলেও এভাবেই কিন্তু ঘটে যায় অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। বাংলামোটর সিগন্যালে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হচ্ছিলেন পথচারীরা। সিগন্যাল ছাড়া এভাবে রাস্তা পারাপারের কারণ জানতে চাইলে এক পথচারীরা বলেন, হাতে কাজের চাপ থাকে প্রতিনিয়ত। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যাচ্ছি। ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাবে তাই এভাবে রাস্তা পার হলাম।
বাংলামোটর সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থেকে দেখা গেল, ওয়েলকাম পরিবহনের একটি বাসের পেছনে ছুটছেন কয়েকজন। দরজার হাতল ধরে ঝুঁঁকি নিয়েই চলন্ত বাসে উঠে পড়লেন কয়েকজন। এক ব্যক্তি হোঁচট খেয়ে আর বাসে উঠতে পারলেন না। পেছনেই আরেকটি বাস আসছিল। অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেলেন তিনি। কাছে গিয়ে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠার কারণ জানতে চাইলে রেগে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই এমনে না উঠলে আর বাসায় যাওন লাগত না। টানা আধ ঘণ্টা খারায় আছি বাসে উঠতে পারলাম না। এহন আবার খারায় থাকন লাগব কতখন।’
বাংলামোটর বাস স্টপেজে বাস থামার অনুমতি নেই এমন স্থানে বাস থেমে যাত্রী উঠাচ্ছে। চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকার কথা থাকলেও তা খোলা। পাশেই দায়িত্ব পালন করছে ট্রাফিক পুলিশ। কয়েকজন চালকের সাথে কথা হলে তাদের একজন বলেন, মানুষও এমনে কইরা বাসে উঠতাছে। যাত্রী যদি এমনে কইরা না উঠাই, তাইলে তো না খায়া মরতে হইব। বাস কোনখানে থামাইতে হইব, কোনখানে চালু রাখতে হইব সেটাই তো বুঝি না।
গতকাল পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো ছিল মতিঝিলের। শাপলা চত্বরের আসে পাশে যান চলাচলের সুবিধার্থে ফুটপাথ সবাইকে হাঁটতে উৎসাহিত করছে স্কাউট সদস্যরা। চালকেরা নিয়ম না মানলে জরিমানা করা হয়েছে। মতিঝিলে দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, শুধু আইন করে সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়। বাসগুলো নির্দিষ্ট স্থানে থামার কথা থাকলেও থামছে না। আবার ঝুঁকি নিয়ে চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছে। এসব বিষয়ে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। নাগরিককে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। তা হলে শৃঙ্খলা ফিরবে।
এবার ঢাকা মহানগরের ট্রাফিক-সংক্রান্ত ভৌত অবকাঠামোর ওপরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। পর্যায়ক্রমে নগরের বেদখল হওয়া রাস্তা উদ্ধার, রাইড শেয়ারিং অ্যাপে চলা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ২৯টি পয়েন্টে চেকপোস্টের কার্যক্রম চলবে, গুরুত্বপূর্ণ ৩০টি পদচারী-সেতু ব্যবহারে পথচারীদের উদ্বুদ্ধকরণে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। স্টপেজ ছাড়া অন্য সময় চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকবে। স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাম পাশের লেন ঘেঁষে নির্ধারিত স্টপেজেই যাত্রী ওঠানামা করাতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement