২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

নতুন রূপে ইন্টারকন্টিনেন্টাল

-

সাবেক রূপসী বাংলা হোটেলকে সংস্কার শেষে নতুন রূপে বাংলাদেশে আবারো ফিরে এসেছে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। গত ২ ডিসেম্বর থেকে সীমিত পরিসরে এর বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
রাজধানীর শাহবাগে প্রায় সাড়ে চার একর জমির ওপর অবস্থিত এ হোটেলটি ১৯৬৬ সালে চালু হয়। শুরু থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ১৯৮৪ সালে যুক্ত হয় শেরাটন হোটেল। ২০১১ সালের মে মাসে শেরাটন কর্তৃপক্ষ হোটেলটির ব্যবস্থাপনা থেকে সরে যাওয়ার পর রূপসী বাংলা নামে এটি পরিচালনা করে সরকার। আর ২০১২ সালে হোটেলটির মালিক রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের সাথে ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ৩০ বছর হোটেলটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় তৎকালীন রূপসী বাংলা হোটেলটি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও হোটেলটি চালু ছিল। সে সময় হোটেলটিকে ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। হোটেলটিতে অবস্থান করে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করেছিলেন একদল বিদেশী সাংবাদিক। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যার ছবি ধারণ করেছিলেন হোটেলে অবস্থানরত বিবিসির বিখ্যাত সাংবাদিক মার্ক টালি ও সাইমন ড্রিং, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) পাকিস্তান ব্যুরোর প্রধান আর্নল্ড জেটলিনসহ আরো অনেক সাংবাদিক।
হোটেলটির ভেতরে-বাইরে ব্যাপক সংস্কারকাজের মাধ্যমে আদল বদলে সম্পূর্ণ নতুন রূপ দেয়া হয়েছে। এ সংস্কারকাজে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ৬২০ কোটি টাকা। যদিও সংস্কারকাজের শুরুতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪০০ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত সংস্কারকাজে ব্যয় বেড়েছে দেড় গুণ। হোটেলটির সংস্কারকাজে চার বছরেরও বেশি সময় লেগেছে। যদিও ২০১৪ সালে হোটেলটি যখন বন্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন বলা হয়েছিল সংস্কার শেষে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে এটি চালু করা হবে। সংস্কারকাজের জন্য আড়াই বছর সময় ধরা হয়েছিল শুরুতে। শেষ পর্যন্ত সেটি চার বছরে গড়ায়।
সর্বশেষ রূপসী বাংলা হোটেল হিসেবে যখন এটি চালু ছিল, তখন তাতে ছোট-বড় মিলিয়ে কক্ষসংখ্যা ছিল ২৭২টি। সংস্কারের পর কক্ষের সংখ্যা কমে ২২৬টিতে দাঁড়িয়েছে। এতে আয়তন বেড়েছে প্রতিটি কক্ষের। পরিবর্তন করা হয়েছে সুইমিংপুল ও ডাইনিং হলের স্থানও। স্থানান্তর করা হয়েছে হোটেলটির প্রবেশপথও। হোটেলকক্ষ থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, হলরুম, লবি সব কিছুরই পরিসর অনেক বেড়েছে। বাণিজ্যিকভাবে চালু হলেও এখনো কিছু কাজ বাকি রয়েছে।
শুধু অবস্থান ও ভবনটি ছাড়া হোটেলের বাকি সব কিছুই নতুন করে সাজানো হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ পরিসর নিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্পা জোন। সারা বিশ্বে এটি ইন্টারকন্টিনেন্টালের ২০৩ নম্বর হোটেল। সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষাকেও সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ জন্য পুরো হোটেলের আলোকসজ্জা এমনভাবে করা হয়েছে, যেখানে ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সীমিত পরিসরে চালু করায় এবং প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অতিথিদের আগমন কম ঘটছে। তবে পর্যায়ক্রমে প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর দেশী-বিদেশী অতিথি সমাগমও বেড়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement