২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

দর্শনার্থীশূন্য নগর জাদুঘর

-

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ভবনের নগর জাদুঘরটিতে পর্যাপ্ত দর্শনীয় বস্তুর সংগ্রহ যেমন নেই, একইভাবে নেই প্রচার-প্রচারণাও। এর ফলে প্রতিদিন গড়ে চারজন দর্শনার্থী ঘুরতে আসেন। কোনো কোনো দিন একজন দর্শনার্থীও যান না পুরনো ঢাকার ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিয়ে সাজানো এ জাদুঘরটিতে।
১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। হাতে গোনা কিছু সংগ্রহ নিয়ে যাত্রা শুরু করা জাদুঘরটির বয়স ২২ বছর পার হলেও এর আধুনিকায়নে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নানা কাজে নগরভবনে গেলেও কারো মধ্যে আগ্রহ জাগায় না জাদুঘরটি। দুই টাকায় টিকিট কেটে কেউ আগ্রহ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেও ফিরে আসেন বিরক্তি নিয়ে।
১৯৮৫ সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে নতুন কোনো সংগ্রহ যুক্ত করা হয়নি। ১৯৯৬ সালে জাদুঘরটি নগর ভবনে স্থানান্তর করা হলেও সংগ্রহশালা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগরভবনের ষষ্ঠতলায় এর অবস্থান। ১৯৮৭ সালের ২০ জুন পুরান ঢাকার পাঁচভাই লেনের একটি বাড়িতে ঢাকা নগর জাদুঘর প্রথম শুরু হয়। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। অন্য উদ্যোক্তাদের মধ্যে ছিলেন ইতিহাসবিদ সিরাজুল ইসলাম, নগরবিশারদ নজরুল ইসলাম, স্থপতি রবিউল হুসাইন ও শিল্পী হাশেম খান। ১৯৯৬ সালের ২০ জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে জাদুঘরের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা নিদর্শন রয়েছে এ জাদুঘরে। ১০০ বছর আগের ঢাকার এ মানচিত্রটি ছাড়াও এখানে আছে প্রাক-মোগল আমল থেকে বাংলাদেশ আমল পর্যন্ত ঢাকার সীমানার ধারাবাহিক বৃদ্ধির নকশা।
প্রদর্শনীকক্ষের মাঝামাঝি রাখা আছে একটি মুদ্রণযন্ত্র। লোহার এই মুদ্রণযন্ত্রের গায়ে খোদাই করা আছে এর নাম, ‘ইমপ্রুভড আলবিওন প্রেস’। ক্যাপশন থেকে জানা গেল, ১৮২২ সালের এই যন্ত্রটি ঢাকার প্রথমদিককার মুদ্রণযন্ত্রগুলোর একটি। জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক এটি জাদুঘরকে দান করেছেন।
নবাবী আমলে ঢাকার প্রশাসনব্যবস্থায় মহল্লার পঞ্চায়েতপ্রধান বা সরদারদের বড় ভূমিকা ছিল। মুনতাসীর মামুনের লেখায় পাওয়া যায়, মহল্লার প্রভাবশালী ব্যক্তিই সরদার হতেন। তারা ছিলেন এলাকার অভিভাবক। নগর জাদুঘরে একটি বড় জায়গাজুড়ে আছে এই সরদারদের ছবি, আর তাদের ব্যবহৃত নানা আসবাব।
জাদুঘরে সংগৃহীত ছবিগুলোও এমন এক ঢাকার গল্প বলে, যার সাথে আজকের ভিড়ভাট্টার যান্ত্রিক নগরের মিল নেই। একটি কাচের শোকেসে প্রায় দুই ফুট দৈর্ঘ্যরে চামড়ার মশক রাখা আছে। ষাটের দশকের আগে এসব মশকে করেই হোটেল ও বসতবাড়িতে পানি সরবরাহ করা হতো। যারা বাড়ি বাড়ি পানি পৌঁছে দেয়ার কাজ করতেন তাদের বলা হতো ভিস্তিওয়ালা। ষাটের দশকের এক ভিস্তিওয়ালার সাদা-কালো আলোকচিত্রও এখানে আছে। জাদুঘরে আরো আছে বুড়িগঙ্গা তীরের বিলিয়ার্ড ক্লাব, ঢাকার প্রথম বিদ্যালয় কলেজিয়েট স্কুলের পুরনো ভবন, ভজহরি সাহা নাটমন্দির, ঢাকার প্রথম পানি শোধনাগারের ছবিসহ বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া স্থাপনার ছবি।
জাদুঘর শুক্র-শনিবার বাদে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা। প্রবেশমূল্য দুই টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement