২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

প্রবল জনবিক্ষোভে কেনিয়া বিমানবন্দর হাতছাড়া আদানির!

প্রবল জনবিক্ষোভে কেনিয়া বিমানবন্দর হাতছাড়া আদানির! - ছবি : সংগৃহীত

কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে জোমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চুক্তিভিত্তিক অধিগ্রহণের জন্য উদ্যোগী হয়েছিল ভারতের গৌতম আদানির গোষ্ঠী। আর তাতেই ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়েছে স্থানীয় বিমানবন্দরের কর্মীদের মধ্যে। আদানি গোষ্ঠী বিমানবন্দর অধিগ্রহণ করলে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, এই আশঙ্কায় গত সোমবার ধর্মঘট করে ফ্লাইট ক্ষেত্রের কর্মী সংগঠন কেনিয়া অ্যাভিয়েশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন।

কী ছিল চুক্তিতে? চুক্তি বাস্তবায়িত হলে জোমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংস্কার এবং একটি অতিরিক্ত রানওয়ে তৈরির কথা ছিল আদানি গোষ্ঠীর। পরিবর্তে আগামী ৩০ বছর এই বিমানবন্দরের মালিকানা থাকত আদানিদের হাতে।

শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যাপক বিক্ষোভে শেষমেশ ওই দেশের আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়। দেশটির স্থানীয় একটি আদালত কেনিয়া সরকার ও আদানিদের এই চুক্তিটির বাস্তবায়নে সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেছে।

বিমানবন্দর সম্প্রসারণের দায়িত্ব আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিং লিমিটেডের হাতে তুলে দেয়ার পরিকল্পনায় স্থগিতাদেশের ফলে কেনিয়ায় আদানি গোষ্ঠী পা রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট দোলাচল তৈরি হয়েছে।

এই বিক্ষোভে নতুন বিপদের গন্ধ পাচ্ছে ভারতের বিরোধী দল। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই ঘটনা ভারতের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ইন্ধন জোগাতে পারে।

মঙ্গলবার তিনি এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘আদানিদের বিরুদ্ধে কেনিয়ার মানুষের আন্দোলন ভারত এবং ভারতের সরকারের বিরুদ্ধে রোষে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

কেনীয় বিমানকর্মীদের দাবি, ওই দেশের সরকার দেশের অন্যতম বড় ও গুরুত্বপূর্ণ এই বিমানবন্দরটিকে পুরোপুরি বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিতে চায়। ওই দেশের শ্রমিক ইউনিয়ন দাবি করেছে, আদানির সঙ্গে চুক্তির ফলে চাকরি হারাতে হবে অনেক কেনীয় শ্রমিককে। এর ফলে কাজে যোগ দেয়ার সুযোগ বাড়বে বিদেশী শ্রমিকদের।

তবে সে দেশের সরকার বার বার বলেছে যে বিমানবন্দরটি বিক্রি করা হচ্ছে না। দেশের বৃহত্তম বিমানবন্দরের সংস্কারের চুক্তির বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি।

কেনিয়া সরকারের দাবি, এটি সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগ। বিমানবন্দর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কার হাতে থাকবে তা-ও চূড়ান্ত নয়।

উল্লেখ্য, আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড সম্প্রতি প্রায় ১৫ হাজার ৫২৬ কোটি রুপির বিনিময়ে নাইরোবির জোমো কেনিয়াট্টা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে সম্প্রসারণ ও পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছিল কেনিয়া সরকারকে।

কিন্তু বিমানবন্দরটি বিক্রি হচ্ছে না, কেনিয়া সরকারের এই আশ্বাসেও কাজ হচ্ছে না কেন? স্থানীয় বাসিন্দাদের আদানি-রোষের নেপথ্যে ঠিক কী কারণ? শুধুই কি কর্মী অসন্তোষ, না কি এর নেপথ্যেও কাজ করছে পড়শি দেশ চীনের হাত!

সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দেশটি বর্তমানে বিপুল ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছে। ঋণদানকারী দেশ সেই চীন।
চীনের কাছে কেনিয়ার ঋণের পরিমাণ এখনও অজানা। তবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট গবেষকদের দাবি, চীনের কাছে কেনিয়ার ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি রুপি।

এ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে অন্য জায়গা থেকে ঋণ নিতে নিতে কেনিয়ার মাথায় চেপে রয়েছে বিপুল ঋণের বোঝা। সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য বলছে, এই মুহূর্তে কেনিয়া দেনায় ডুবে রয়েছে।

ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী চীন এটা কখনোই মানতে পারেনি কেনিয়া বা আফ্রিকার অন্য দেশগুলোতে ভারতীয় সংস্থা বিনিয়োগ করুক। তাই কেনিয়ার বিমানবন্দরের কর্মী সংগঠনের এই বিক্ষোভের নেপথ্যে বেইজিংয়ের ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখতে পাচ্ছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যগুলো।

এবার কেনিয়ায় বিমানবন্দর পরিচালনার দায়িত্বভার না পাওয়া আদানি গোষ্ঠীর জন্য আর একটি ধাক্কা হিসাবেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement