তিউনিসিয়ায় পার্লামেন্ট চালুর দাবিতে বিক্ষোভ
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৪ নভেম্বর ২০২১, ২৩:৩৮
উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়ায় স্থগিত পার্লামেন্ট চালুর দাবিতে রাজধানী তিউনিসে কয়েক হাজার লোক বিক্ষোভ করেছে। রোববার পার্লামেন্ট ভবনের কাছাকাছি এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সমাবেশস্থলে কয়েক শ’ পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। পার্লামেন্টের দিকে বিক্ষোভকারীরা অগ্রসর হলে পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
বিক্ষোভকারীরা ‘স্বাধীনতা! স্বাধীনতা!’, ‘কায়েস সাইদের পতন হোক’ ও ‘পুলিশি রাষ্ট্র নিপাত যাক’ বলে স্লোগান দেয়।
বিক্ষোভকারীদের এক নেতা জাওহার বিন মোবারক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘২৫ জুলাই থেকে আমরা এক ব্যক্তির শাসনে আছি... তারা রাস্তা খুলে দেয়া ও অবরোধ শেষ করা পর্যন্ত আমরা এখানে থাকবো।’
তিউনিসভিত্তিক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক এলিজা ভল্কম্যান জানান, পুলিশ রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিলেও লোকজন বিক্ষোভে আসতে থাকে।
তিনি জানান, বেশ কিছু সংখ্যক বিক্ষোভকারী ২৫ জুলাই থেকে গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিক, পার্লামেন্ট সদস্য, আইনজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বিশালাকারের ছবি বহন করেন।
ভল্কম্যান বলেন, ‘তারা পার্লামেন্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরুর দাবি করেন। ২০১৪ সালের সংবিধান পুনরায় প্রবর্তনের দাবি করেন তারা। একই সাথে কায়েস সাইদের পদত্যাগের ও নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি করেন তারা।’
এর আগে তিউনিসিয়ায় কায়েস সাইদের শাসনের বিরুদ্ধে দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার সদস্য ও সমর্থকরা বিক্ষোভ করে আসলেও রোববারের বিক্ষোভে ‘বিভিন্ন ধারার’ লোকেরা অংশ নেন বলে জানান ভল্কম্যান।
গত ২৫ জুলাই করোনা পরিস্থিতিতে তিউনিসিয়ায় সৃষ্ট দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় জেরে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর রাতে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট ৩০ দিনের জন্য স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মাশিশিকে বরখাস্ত ও দেশের নির্বাহী ক্ষমতা নিজের হাতে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করেন।
পরে ২৩ আগস্ট 'রাষ্ট্রের জন্য হুমকি' বিবেচনায় পরবর্তী আদেশ দেয়া না পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার আদেশ দেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ।
অপরদিকে ২২ সেপ্টেম্বর জারি করা এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধানের কিছু অংশ স্থগিত করার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা জোরদার করেন সাইদ।
তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো এই আদেশকে 'সাংবিধানিক অভ্যুত্থান' বলে অভিযোগ করে আসছে।
২৬ জুলাই দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আননাহদার প্রধান ও পার্লামেন্ট স্পিকার রশিদ গানুশিসহ দলীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সমর্থকরা রাজধানী তিউনিসে পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। অপরদিকে প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদের সমর্থকরাও পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হন। এই সময় দুই পক্ষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।
অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ। একইসাথে তিনজনের বেশি লোককে প্রকাশ্যে জমায়েত হওয়ায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিলো।
নির্বাহী ক্ষমতা হাতে নেয়ার পর বেশ কিছু মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন কায়েস সাইদ। এছাড়া বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতাকে দেশটিতে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
এদিকে ৪ নভেম্বর আরব বসন্তের বিক্ষোভ পরবর্তী তিউনিসিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট মুনসেফ মারজুকির বিরুদ্ধে তিউনিসিয়ার আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদের এসব পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে দেশটিতে স্বৈরাচারী শাসন ফিরে আসার শঙ্কায় আছেন।
এর মধ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীকে বহিস্কার ও পার্লামেন্ট স্থগিতের দুই মাস পর নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেন কায়েস সাইদ। ভূতত্ত্ববিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক নাজলা বুউদেন রমাদানকে তিউনিসিয়ার প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট সাইদ।
পরে ১১ অক্টোবর নাজলা বুউদেন রমাদানের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করা হয়।
২০১১ সালে আরব বসন্তের সূচনাকারী দেশ তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে ২৪ বছর দেশটি শাসন করা একনায়ক জাইন আল আবেদীন বিন আলী ক্ষমতাচ্যুৎ হন। এর পর থেকেই গত দশ বছর ভঙ্গুর অবস্থা সত্ত্বেও আরব বিশ্বের একমাত্র গণতান্ত্রিক শাসন উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে চালু ছিলো।
সূত্র : আলজাজিরা
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা