আলজেরিয়ার পর এবার কি সুদানের পালা?
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ০৯ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৪১
৩০ বছরের শাসনকালে এবারই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদের মুখে পড়েছেন সুদানের প্রেসিডেন্ট বশির। অর্থনৈতিক মন্দা আর উচ্চ খাদ্য মূল্য ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধ ক্ষোভকে উস্কে দিচ্ছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে আলজেরিয়ার পর এবার হয়তো আরব বসন্তের ঢেউ লাগতে পারে সুদানে।
ইসলামপন্থীদের সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৯৮৯ সালে সুদানের ক্ষমতায় আসার পর এবারই তিনি সবচেয়ে বড় বিক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছেন।
এবার অবশ্য তার বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উৎসাহিত করেছে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট আবদুল আজিজ বুতেফলিকার পদত্যাগ। ব্যাপক বিক্ষোভের জের ধরে সামরিক বাহিনীর চাপের মুখে উত্তর আফ্রিকায় সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের শাসনের অবসান ঘটেছে তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে। সুদানে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম মুখপাত্র সারাহ আবদুল জলীল বলছেন, বুতেফলিকার বিদায় আফ্রিকায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সফলতার একটি লক্ষণ।
একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি
অনেক বছর ধরেই সুদানের অর্থনীতি কঠিন পরিস্থিতিতে আছে। একটি গৃহযুদ্ধের জের ধরে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়ে যায় ২০১১ সালে। ফলে দুই-তৃতীয়াংশ তেল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয় খার্তুম।
বর্তমানে দেশটির সরকার ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করলেও আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বলছে এটি দুই শতাংশের বেশি হবে না।
এ অবস্থায় গত বছরের ডিসেম্বরে রুটি ও তেলের দাম বাড়তে শুরু করলে দেশটিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়।
সুদানের সাংবাদিক জয়নব মোহাম্মদ সালিহ বলেন, সুদানের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষজন ব্যাংকের চেয়ে ম্যাট্রেসের নিচে টাকা জমাতে পছন্দ করছে।
দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
সুদানে গত শুক্রবার নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানের ৩৪তম বার্ষিকীতে বিক্ষোভকারীরা সেনা সদর দপ্তরের সামনে অবস্থান নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, শিগগিরই এটা প্রেসিডেন্ট বশিরের পদত্যাগের দাবির দিকে মোড় নেবে। কারণ তার শাসন নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।
দুর্নীতির সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৭২ নম্বরে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বশিরের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সামরিক বাহিনীর আনুগত্য
বিক্ষোভকারীরা আশা করছে, বশিরের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভকে সমর্থন দেবে সামরিক বাহিনী। এর ফলে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের পথ খুলে যাবে।
তাদের এ আশাবাদের কারণ হচ্ছে, গত রোববার পুলিশের টিয়ার শেল ও গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়ার চেষ্টার সময় বিক্ষোভকারীদের সুরক্ষা দেয়ার চেষ্টা করেছে নৌ ও বিমান বাহিনীর সৈন্যরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা এমনটিই দাবি করছেন। এছাড়া গত তিনমাস সেনাবাহিনী কার্যত কোনো পক্ষই নিচ্ছে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় দেশটিতে এ পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি মারা গিয়েছে। যদিও সরকারিভাবে এ সংখ্যা বলা হচ্ছে ৩২।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যম সারির সেনা কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তবে শীর্ষ কর্মকর্তারা এখনো সরকারের প্রতি অনুগত।
গত ফেব্রুয়ারিতে বশির কিছু সেনা ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে প্রভিন্সিয়াল গভর্নর পদে নিয়োগ দিয়েছেন এবং সারাদেশে বছরব্যাপী জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। সূত্র : বিবিসি